আজকাল ওয়েবডেস্ক: তাঁর ডান ও বাঁ পা দুই-ই সমানে চলত। বাঁ পা বেশি শক্তিশালী বলে খেলোয়াড়জীবনে লেফট ব্যাক পজিশনেই খেলতেন। 

বল পায়ে উইং ধরে তিনি গতি তুললে  সতীর্থরা বলতেন, 'রাজধানী এক্সপ্রেস' ছুটছে। 

তিনি আবার সম্পর্কে ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারের শ্বশুরমশাই। 

প্রাক্তন ফুটবলার সমীর চৌধুরী সুপার কাপের ফাইনাল দেখার পরে কাঠগড়ায় তুলছেন লাল-হলুদের স্ট্রাইকার হিরোশিকে। 

সেই সঙ্গে বাঙালি গোলকিপার কোচ সন্দীপ নন্দীর সঙ্গে যে অবিচার করা হয়েছে, তারও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। 

সুপার কাপ ফাইনালের কাটাছেঁড়া করতে বসে সমীর চৌধুরী বললেন, ''জাপানি স্ট্রাইকার হিরোশিকে আমার একদম ভাল লাগেনি। দৌড়তে পারছে না, ওকে দেখে মনে হল স্টেপিং ঠিক নেই। চোট ছিল কিনা কে জানে! আমার তো ওকে দেখে অসুস্থ বলেই মনে হল।'' 

সুপার কাপ ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের হারের পরে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। গ্রিক স্ট্রাইকার দিয়ামান্তাকোসকে কেন ছেড়ে দেওয়া হল, সেই প্রশ্নও উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। 

তিন প্রধানের হয়ে খেলা সমীর চৌধুরী বলছেন, "স্ট্রাইকার হবে চনমনে। উইং থেকে বল ভাসানো হলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। হিরোশির থেকে দিয়ামান্তাকোস ভাল ছিল। ডার্বিতে গোল করেছিল। ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। অথচ ওকে সরিয়ে হিরোশিকে আনা হল। তাতে লাভ কিছু হল না।'' 

ফুটবলভক্তরা সুপার কাপের সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন শিল্ড ফাইনালের। আইএফএ শিল্ড ফাইনালে ইস্ট-মোহনের খেলা গড়িয়েছিল পেনাল্টি শুট আউটে। সুপার কাপের মীমাংসা ১২০ মিনিটে না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। পেনাল্টি স্পট থেকে গোললাইন, পৃথিবীর রহস্যময় সরণী। কত জন এই রাস্তায় পথ হারিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। 

রবিবার মাণ্ডবী তীরে ইস্টবেঙ্গলের রশিদ ও বিষ্ণু পথ হারান। 

দুই টুর্নামেন্টের চিত্রনাট্যে মিল রয়েছে অনেক। শিল্ড ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটের আগে দেবজিৎ মজুমদারকে নামানো হয়েছিল প্রভসুখান গিলকে বসিয়ে। 

অভিযোগ ছিল, তৎকালীন গোলকিপিং কোচ সন্দীপ নন্দীর পরামর্শেই পেনাল্টি শুট আউটের আগে গিলকে বসিয়ে দেবজিৎকে মাঠে পাঠানো হয়েছিল। তার পরের ঘটনা ইতিহাস। 

রবি-রাতে গোলকিপার আর পরিবর্তন করেনি ইস্টবেঙ্গল। গিলও বাঁচাতে পারেননি লাল-হলুদকে। সমীর চৌধুরী বলছেন, ''শিল্ড ফাইনালে দেবজিৎকে নামানো নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। যদিও সেই অধ্যায় এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে। সুপার কাপ ফাইনালে গিলই সারাক্ষণ খেলেছে। কিন্তু এ নিয়ে আর কথাবার্তা হচ্ছে না। আসলে টাইব্রেকার হল লটারির মতো। যে কেউ জিততে পারে। এটা ঠিক দেবজিৎ অতীতে পেনাল্টি বাঁচিয়ে দলকে জিতিয়েছে। সন্দীপ নন্দী এটা জানত। সেই কারণেই দেবজিৎকে নামানোর কথা বলেছিল। এখন বুঝতে পারছি, সন্দীপ নন্দীর উপরে কী অবিচারই না হয়েছে। সন্দীপ যদি গোলকিপার পরিবর্তনের কথা বলেই থাকে, অস্কার ব্রুজোঁ তো  হেডকোচ ছিলেন। উনি কেন চিন্তাভাবনা করলেন না?কেন দোষ চাপিয়ে দিলেন বেচারি সন্দীপের উপরে? আসলে আমরা বিদেশিদের মাথায় তুলে ফেলেছি। দেশি-বিদেশির কোনও ফারাক নেই। সেটাই দেখা যাচ্ছে।'' 

ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলীয় তারকা মিগুয়েলের খেলা মনে ধরেছে প্রাক্তন ফুটবলারের। তিনি বলছেন, ''খুবই দক্ষ ফুটবলার মিগুয়েল। পায়ের কাজ রয়েছে। এরকম ফুটবলারের খেলা দেখার জন্যই দর্শকরা মাঠে আসেন।'' 

রবিবারের ফাইনালের ময়নাতদন্ত করতে বসে সমীর চৌধুরী বলছেন, ''সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলে ইস্টবেঙ্গলেরই ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল। হিরোশি ঠিক পজিশন নিতে পারল না। উইং থেকে ভাসানো বলগুলো ওর মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। ওর হেড গোয়ার গোলকিপারের হাতে জমা পড়ল। টাইব্রেকার পর্যন্ত তো ম্যাচটা যায়ই না। আগেই শেষ করা যেত।'' 

আরও একটা ট্রফি হাতছাড়া হওয়ার পরে লাল-হলুদ ভক্তদের সম্মিলিত বক্তব্যও এটাই। ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে এখন প্রশ্ন অনেক, কিন্তু সদুত্তর নেই।