আজকাল ওয়েবডেস্ক: তুকতাক কোচ থেকে 'ভারতের মোরিনহো' খালিদ জামিল শুরুতেই বাঘ মারলেনদেশি বনাম বিদেশি কোচ নিয়ে যে তর্ক বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে, তা বোধহয় খালিদ জামিল থামিয়ে দিলেন। দেশি কোচরাও পারেন বিদেশি দলকে বশ করতে। দেশীয় কোচরাও বিশ্বখ্যাত কোচকে থামিয়ে দিতে পারেন।

বহু যুদ্ধের সৈনিক মেহতাব হোসেন বলছেন, ''দেশি কোচরা কোনও অংশে কম যান না, এবার মনে হয় তা বলার সময় এসে গিয়েছেখালিদ জামিল দৃষ্টান্ত তৈরি করে গেলেন। লক্ষ লক্ষ টাকা দ্বিতীয় শ্রেণির বিদেশি কোচদের পিছনে অপচয় করা বন্ধ হোক এবার। তার বদলে জাতীয় দলের হয়ে ঘাম ঝরিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের সুযোগ দেওয়া হোক। যাঁরা প্যাশন দিয়ে খেলেছেন এবং এখন কোচিং করাচ্ছেন তাঁদের কথা ভাবা হোক। ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের তৈরি করা হোক। কোনও অংশে দেশি কোচরা কম যান না''

ওমানের কোচ কার্লোস কিরোজ। তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর প্রাক্তন হেডস্যর। ইরানের কোচ ছিলেন। সেই তাঁর হাতে এখন ওমানের রিমোট কন্ট্রোল। ভয়ডরহীন খালিদ জামিল থামিয়ে দিলেন কিরোজের দলকে। ফিফা ক্রমতালিকায় ভারত ১৩৩ নম্বরে। ওমান সেখানে ৭৯। ধারে ও ভারে বহু শক্তিশালী দলকেও হারানো সম্ভব।

আরও পড়ুন: ওমানকে হারিয়ে নেশনস কাপে তৃতীয় ভারত, ভারতের 'মোরিনহো' খালিদকে জেতালেন গুরপ্রীত ...

মেহতাব বলছেন, ''কেন সম্ভব নয়? কোন অংশে আমরা পিছিয়ে? কলেজের টিচারও কোচ, যিনি ডিস্ট্রিক্ট লেভেলেও খেলেনি সে-ও কোচ। তাহলে উন্নতি হবে কী করে?'' প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন মাঝমাঠের ব্রিগেডিয়ার

তারকাহীন একটা দল নিয়ে কাফা নেশনস কাপে গিয়েছিলেন খালিদ জামিল। গোল করার লোক নেই। গোল কীভাবে হবে, জানা নেই। গোল কিছুতেই খাব না, এই মানসিকতা নিয়ে মাঠে খেলোয়াড়দের পাঠিয়েছিলেন খালিদ। তাঁর দর্শন সফল। নেশনস কাপে যাওয়ার আগে প্লেয়ার ছাড়া নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছিলমেহতাব বলছেন, ''টিমগেমে তারকার প্রয়োজন পড়ে না। হার্ডওয়ার্কিং দল দরকার। কবে ঘি দিয়ে ভাত খেয়েছি, তা নিয়ে ভাবলে চলবে না। মাঠে নেমে লড়তে হবে বাঘের মতো''

তবে কি ভারতীয় ফুটবলে শুরু হয়ে গেল খালিদ যুগ? মেহতাব বলছেন, ''সবে তো শুরু হল। তবে শুরুটাই বেশ ভাল ভাবে করল খালিদ ভাই। অনেক শুভেচ্ছা আগামিদিনের জন্য''

প্রাক্তন স্ট্রাইকার দীপেন্দু বিশ্বাস আশাবাদী খালিদের হাত ধরেই ভারতীয় ফুটবল উন্নতির পথে হাঁটবে। খেলোয়াড় জীবনে গোল করার পরে হাত দুটো পাখির মতো ছড়িয়ে দিতেন তিনি। সেই দীপেন্দু বলছেন, ''খালিদ জামিলকে যেদিন প্রথম কোচ করা হয়েছিল, সেদিনই আমি বলেছিলাম, ভারতীয় কোচদের হাতে পড়লেই এদেশের ফুটবলের উন্নতি হবে। ইতিহাসও তাই বলছে। রহিম সাহেব, পিকে ব্যানার্জিদের সময় ভারতীয় ফুটবল সাফল্য পেয়েছিল। বিদেশি কোচরা খারাপ সেটা বলছি না। চিরিচ মিলোভান, আক্রমভ, স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনরা সাফল্য পেয়েছেন ঠিকই তবে হাল আমলে বিদেশি কোচের অধীনে ভাল ফলাফল আসছিল না। দেশীয় কোচদের হাতে পড়লেই দেশের ফুটবলের শ্রী বৃদ্ধি হবে বলেই আমার বিশ্বাস। খালিদ জামিল তো প্রথম সুযোগেই দেখিয়ে দিল।''   

আইএসএলে জামশেদপুর ও নর্থ ইস্টের কোচ হিসেবে দুর্দান্ত কাজ করেছেন। আইজলকে আই লিগ জেতান। খালিদের সামনে জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। তাঁকে নিয়ে কত গল্প, কত বিতর্ক। খালিদ জামিল সে সবকে গুরুত্বই দেননি কখনও। নিজের লক্ষ্যে তিনি অবিচল থেকেছেন। জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েই খালিদ জামিল টপ গিয়ারে গাড়ি চালাতে শুরু করে দিলেন। আজকের পর বলতে দ্বিধা নেই ভারতীয় ফুটবলে শুরু হয়ে গেল খালিদ-যুগ।

আরও পড়ুন: খালি পেটে মোহনবাগানের হয়ে গোল করেছেন, হিরের দর্পচূর্ণের চাকরিহীন নায়কের আর্তি, 'এই সরকার যদি আমার কথা