আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোলের পরে 'সিউ' সেলিব্রেশন করতেই দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু আল রাইয়ানের বিরুদ্ধে গোলের পরে সাররিয়ালিস্ট ছবি দেখা গেল আল আওয়াল পার্কে।
গোলের পরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আকাশের দিকে তাকিয়ে খুঁজছেন তাঁর বাবাকে। অস্ফুটে কথা বলছেন প্রয়াত বাবার সঙ্গে। স্মরণকালের মধ্যে এমন আবেগঘন ছবির জন্ম কি কখনও ফুটবলমাঠে জন্ম দিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো? তিনি গোল করেন, রেকর্ড গড়েন, রেকর্ড ভাঙেন। কিন্তু গোলের পরে বাবাকে কখনও স্মরণ করেছেন বলে তো মনে পড়ছে না ওয়াকিবহাল মহলের।
খেলার শেষেও পর্তুগিজ মহাতারকা আবেগপ্রবণ। তিনি বলছেন, ''আজকের গোলটার অন্যরকম অর্থ রয়েছে। বাবা বেঁচে থাকলে কী দারুণ হতো! আজ বাবার জন্মদিন।''
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এলিটে নিজের প্রথম গোলটি পান সিআর সেভেন। তাঁর গোল করার দিন জিতেছে আল নাসেরও। রোনাল্ডোর ক্লাব আল নাসের ২-১ গোলে হারিয়েছে আল রাইয়ানকে। দলের দ্বিতীয় গোলটি পর্তুগিজ মহাতারকার। তার পরই বাবাকে গোল উৎসর্গ করেন তিনি।
সেই ২০০৫ সালে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান রোনাল্ডোর বাবা। বেঁচে থাকলে তাঁর এখন বয়স হত ৭১। যে রোনাল্ডো শৈশবে বাবার ঘনিষ্ঠ হতে পারেননি, সেই তিনিই বাবাকে খুঁজছেন আকাশে।
গোল করার পরমুহূর্তে রোনাল্ডোর কি মনে পড়ছিল ধূসর শৈশবের সেই দিনগুলো? তাঁর বাবার অবসাদে চলে যাওয়ার কথা? মোজাম্বিক ও অ্যাঙ্গোলার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শেষে রোনাল্ডোর বাবা হোসে দিনিস অ্যাভেইরো ফিরে আসেন ঘরে।
ডিকেন্সের ভাষায়, সে বড় সুখের সময় ছিল না রোনাল্ডো-পরিবারে। উপার্জন ছিল না, সংসার কীভাবে চলবে, সেই রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না রোনাল্ডোর বাবা। হতাশার সাগরে ডুবে যান তিনি। অর্থের জন্য স্থানীয় ফুটবল ক্লাবে খেলোয়াড়দের ব্যাগ বহন করতেন। ক্রমে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। বাবাকে দেখে অসহায় বোধ করতেন শৈশবের রোনাল্ডো। সেই ছেলেবেলায় বাবাকে দেখার পরই রোনাল্ডো শপথ নেন, মাদক তিনি গ্রহণ করবেন না।
ছেলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অ্যাভেইরো স্বপ্ন দেখতেন তাঁর ছেলে একদিন মহাতারকা হব। ফুটবলারদের ব্যাগ বহন করার সময়ে বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করে ফেলতেন এমন স্বপ্নের কথা। রোনাল্ডো কি জানতেন তাঁকে নিয়ে কতটা উচ্চাশা তাঁর বাবার? রোনাল্ডো এখন অনেকের প্রেরণা, অনেকের আইডল তিনি।
থামতে জানেন না রোনাল্ডো। কেরিয়ারে একের পর এক স্টেশন টপকে চলেছেন। ফুটবলজীবনের উপান্তে পৌঁছেও তিনি গোল করছেন। তাঁর পা কথা বলছে। শিখর থেকে শিখরে ছুটছেন। রোনাল্ডোকে রোখে কার সাধ্যি! বাবার জন্মবার্ষিকীতে কেরিয়ারের ৯০৪ নম্বর গোলটি করে ফেললেন তিনি। রোনাল্ডো শো চলছেই। তাঁর ভক্তরা বলছেন, শো মাস্ট গো অন।
