আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ এশিয়া কাপ জিতলেও ট্রফি হাতে পায়নি ভারত। এই পরিস্থিতিতে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে সমর্থন করলেন এশিয়া কাপ ফাইনালের নায়ক তিলক ভার্মা। তাঁর মতেও ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ এখন আর কোনও লড়াই–ই নয়। মঙ্গলবার হায়দরাবাদে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সলমন আঘাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে আর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি তিনি।


এশিয়া কাপে তিনটি ম্যাচেই পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত। ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও প্রথম দু’টি ম্যাচে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। তা নিয়ে তিলক বলেছেন, ‘সূর্যভাইয়ের সঙ্গে আমি সহমত। এখন আর এই ম্যাচে (ভারত–পাকিস্তান) তেমন লড়াই নেই। তবু এটা খেলা। আমরা ফাইনালের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা জানতাম ওরা মন্থর পিচে গতি কমিয়ে বল করবে। আমাদের সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করবে। সেটাই হয়েছে। আমরা একাধিক ভাল জুটি তৈরি করে ম্যাচটা ছিনিয়ে নিয়েছি। ওরকম চাপের পরিস্থিতি থেকেও জিতেছি আমরা। জয়টাই তো আসল।’ প্রসঙ্গত, সুপার ফোরের ম্যাচ জেতার পর সূর্যকুমার বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় আপনাদের সকলের ভারত–পাকিস্তান লড়াই নিয়ে এবার প্রশ্ন করা বন্ধ করা উচিত। আমার মতে, যদি দুটো দল ১৫–২০টা ম্যাচ খেলে এবং স্কোরলাইন ৭–৭, অথবা ৮–৭ হয়, তবেই সেটাকে ভাল ক্রিকেট বলা যায়। আমি সঠিক পরিসংখ্যান জানি না। কিন্তু একটা দলের পক্ষে যদি স্কোরলাইন ১৩–০, ১০–১ হয়, তাহলে এখন আর এটা কোনও লড়াই নয়। আর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়।’


এশিয়া কাপের ফাইনালে চাপের মুখে ঠান্ডা মাথায় ৬৯ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছেন তিলক। ফাইনালে তাঁর ইনিংসকে বলা হচ্ছে ‘অপারেশন তিলক’। ভারত ২০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর থেকে ২২ গজের এক প্রান্ত দায়িত্ব নিয়ে আগলে রেখেছিলেন ২২ বছরের তরুণ। জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় দলকে অভিনন্দন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘খেলার মাঠেও অপারেশন সিঁদুর। ফলাফল একই– ভারত বিজয়ী। আমাদের ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছা।’ তা নিয়ে তিলক বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের জয়কে অপারেশন সিঁদুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেকে আবার বলছেন, অপারেশন তিলক। এটা বিরাট পাওনা। তবে আমার এটা পছন্দ নয়। আমরা খেলার মাঠে দেশের প্রতিনিধিত্ব করি। আসলে সঠিক সময় সুযোগটা পেয়েছিলাম আমি। সেটা কাজে লাগাতে পেরেছি। দেশের জন্য কিছু করতে পারায় খুব ভাল লাগছে।’


তিনি আরও বলেছেন, ‘শুরুতেই ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ায় বেশ চাপ তৈরি হয়েছিল। ওরা (পাকিস্তান) তখন আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করছিল। আমি মিডল অর্ডারে ব্যাট করি। সে সময় নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, এই পরিস্থিতিতে বেপরোয়া শট খেলে আউট হলে দেশকে হতাশ করব। সব সময় জেতার মানসিকতা নিয়ে খেলি। দলকে জেতাতে হলে কী করতে হবে, সেটাই তখন আমার একমাত্র ভাবনা ছিল। শুধু নিজের ব্যাটিং নিয়ে ভাবছিলাম। অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সুযোগ ছিল না তখন।’


সে সময় মাঠের পরিস্থিতি কেমন ছিল? তিলক বলেছেন, ‘অনেক কিছু ঘটছিল সে সময়। আমাকে অনেক কিছু বলা হচ্ছিল। আমাকে বিরক্ত করতে চাইছিল। কিন্তু আমি মুখ খুলিনি। তবে এসব হয়। বিশেষ করে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে হয়। এগুলো খেলার অঙ্গ।’ আপনি কোনও জবাব দেননি? তিলক বলেছেন, ‘ম্যাচ জিতে জবাব দিয়েছি। ওটাই আসল জবাব। দলকে জিতিয়ে জবাব দিতে চেয়েছিলাম। সেটাই করেছি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর যা বলার বলেছি। খেলা শেষ হওয়ার আগে একটা কথাও বলিনি।’


কেমন ছিল সেই ৬৯ রানের ইনিংস? আপনার অনুভূতি কেমন? তিলক বলেছেন, ‘খুবই চাপ ছিল। মাঠে সেটা বুঝতেও পারছিলাম। তবে গোটা ইনিংসটা খেলেছি দেশের কথা ভেবে। দেশ সব সময় আগে। যে কোনও কিছুর চেয়ে বড়। দেশের জন্য আমি জীবন দিতেও রাজি। এটুকুই মাথায় ছিল। চাপের মধ্যেও মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেছি। আমি তখন ১৪০ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। নিজের ভুলের জন্য এত মানুষকে হতাশ করতে পারি না। ছোট থেকে ব্যাটিংয়ের যে সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিখে বড় হয়েছি, সেগুলো মাথায় রেখে খেলার চেষ্টা করেছি।’
এদিকে, দেশকে এশিয়া কাপ জেতানোর পর তিলক আরও বড় স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘এশিয়া কাপে দলকে সাহায্য করতে পেরে আমি অবশ্যই খুশি। তবে আমার লক্ষ্য আরও বড়। দেশের জন্য বিশ্বকাপ জিততে চাই। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ দেখে ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয় আমার। সে জন্যই পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার কথা ভাবি। আগামী বছর বিশ্বকাপ রয়েছে। এখন আমার লক্ষ্য সেই বিশ্বকাপের ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া এবং দেশকে বিশ্বকাপ জেতানো।’