গোপাল সাহা

রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসআইআর প্রক্রিয়ায় ফর্ম বিতরণ শুরু হয়েছে ৪ নভেম্বর থেকে, বুধবার ছিল তার দ্বিতীয় দিন। এই দু’দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এনুমারেশন ফর্ম বিলি করা হয়েছে প্রায় এক কোটি। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিলি হয়েছিল ১৮ লক্ষ, কিন্তু দ্বিতীয় দিনে বিকেল ৪টে অবধি সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ লক্ষে। 

ফর্ম বিতরণ নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ঘটনাও নজরে এসেছে। শাসক এবং বিরোধীদের মধ্যে একাধিক জেলাগুলিতে তরজা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একদিকে যেমন শাসক দল প্রধান বিরোধীদল বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে। পাল্টা বিজেপিও শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছে। যদিও এ ধরনের ঘটনা বিশৃঙ্খলা বিক্ষিপ্ত বলেই জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক দপ্তর। 

যদিও এই বিষয়ে রাজ্যে শাসকদল তৃণমূল সম্পূর্ণভাবে বিজেপিকেই দায়ী করেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি এসআইআর নিয়ে রাজনীতি করছে এবং ঘুরপথে এনআরসি করার প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এসআইআর নিয়ে মঙ্গলবার পথে নেমেছিলেন। পাশাপাশি মতুয়া সংঘের প্রধান তথা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর বুধবার থেকে আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছেন। এই অনশনকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর নাটক বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন। 

এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তৃণমূলের এ ধরনের প্রতিবাদী মিছিল বা অনশন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজ্যের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। 

বিজেপির বক্তব্য, যা কিছু হয়ে যাক এসআইআর কোনও ভাবেই বন্ধ হবে না। এই প্রক্রিয়ায় ভোটার লিস্ট সংশোধন করেই ছাড়বে বলে স্পষ্ট জানিয়েছে রাজ্য বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ একাধিক নেতৃত্ব। যদিও, এসআইআর প্রক্রিয়ায় বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিতরণের সময় বিএলও-দের সঙ্গে বিএলএ-দের দিতে পারেনি বিরোধীরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিএলএ-ই রয়েছে,  দাবি তৃণমূলের। 

এখন প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি দুর্বল হয়ে পড়েছে? যার ফলে নিজেদের বিএলএ সদস্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন? এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল।

উল্লেখ্য, ভারতের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত জাতীয় ও রাজ্যস্তরের রাজনৈতিক দলগুলি  গতকাল পর্যন্ত ৬৩ হাজারেরও বেশি বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA) নিয়োগ করেছিলেন। আজ সিইও তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত বিএলএ নিয়োগ হয়েছে ৯৮৭০০ জন। এর মধ্যে বিজেপির ৩৫৬৫১, সিপিএমের ২৭৩৯২, কংগ্রেসের ৬৮২২, তৃণমূলের ২৭৭৪৪ এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ১০৯১ জন। জেলা নির্বাচন আধিকারিকরা (DEO) প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে আবারও অনুরোধ করেছেন যাতে প্রতিটি বুথে একজন করে বিএলএ নিযুক্ত করা যায়।

দ্বিতীয় দিনের রাজ্যের এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যে সার্বিক পরিস্থিতির বিষয় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল উত্তরবঙ্গ যাওয়ার আগে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বুথ সংখ্যা ৮০ হাজারের উপর, সমস্ত জায়গায় কথা হয়েছে আধিকারিকদের সঙ্গে, শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ চলছে। ইআরও-রা রিপোর্ট দিচ্ছেন। রাজ্যে এতগুলো বুথ রয়েছে। অল্পবিস্তর কিছু হতেই পারে, এমনিতে সব শান্তিপূর্ণ।”