আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর থেকে শান্তিনিকেতনের লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে শুরু হচ্ছে বিশ্বভারতীর প্রথম ইন্ডাস্ট্রি–অ্যাকাডেমিয়া মিট—‘কনফ্লুয়েন্স ২০২৫’। দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান শুরু হবে ৬ নভেম্বর। চলবে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। বহু মাসের প্রস্তুতির পর প্রায় সবকিছুই তৈরি। লিপিকা প্রেক্ষাগৃহ প্রাঙ্গণকে ইতিমধ্যেই নতুন সাজে সাজানো হয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য—বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পজগতের মধ্যে একটি পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা। যেখানে শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার মেলবন্ধন ঘটবে।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালু করার প্রস্তুতি চলছে। এর ফলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে-কলমে কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ পাবেন। এই উদ্দেশ্যেই আয়োজিত হয়েছে ইন্ডাস্ট্রি–অ্যাকাডেমিয়া মিট। সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি সংস্থা-সহ দেশ-বিদেশের প্রায় ২০০টিরও বেশি সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন কৃষি বিভাগ-সহ সীমিত কিছু বিভাগেই ক্যাম্পাসিং ও প্লেসমেন্টের ব্যবস্থা ছিল। এবার বিশ্ববিদ্যালয় চাইছে এই কর্মসূচিকে সব বিভাগে প্রসারিত করতে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও শিল্পোদ্যোগীদের যুক্ত করতে চায় বিশ্বভারতী প্রশাসন। অতীতে যেমন রতন কুটির, গোয়েঙ্কা ও বিড়লা হোস্টেল নির্মাণে দেশের শিল্পপতিরা এগিয়ে এসেছিলেন, তেমন উদ্যোগ ফের শুরু করার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা নিতে চাইছেন বর্তমান কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান, প্রথাগত সিলেবাসে আবদ্ধ না থেকে শিল্পক্ষেত্রের বাস্তব প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার বিষয়বস্তু ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি তৈরি করাই এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য। সংস্থাগুলির সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রম, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানমুখী প্রশিক্ষণের পথ খুলবে বলে আশা করছেন তিনি। 'কনফ্লুয়েন্স ২০২৫’-এর সাজসজ্জা ও ভিজ্যুয়াল কনসেপ্টের দায়িত্ব নিয়েছে শিল্পসদন। শিক্ষার্থীদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল সৃজনের দায়িত্ব। পুরনো ও অব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহার করে তাঁরা তৈরি করেছেন একাধিক আউটডোর ইনস্টলেশন ও ভাস্কর্য। বাঁশ, কাঠ, টেরাকোটা, শঙ্খ ও লোহার খণ্ডাংশের ব্যবহারে স্থানীয় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংলাপ গড়ে তুলেছে এই শিল্পপ্রয়াস।
দু'দিনের এই কর্মসূচিতে আয়োজিত হবে শিল্প মেলা। যেখানে আগত সংস্থাগুলি তাদের শিল্পসামগ্রী প্রদর্শন করবে। শিল্পসদন ও কলাভবনের ছাত্রছাত্রীরাও অংশ নেবেন প্রদর্শনীতে। স্থানীয় কারুশিল্পকে ডিজিটাল ও অনলাইন বাজারে পৌঁছে দেওয়ার সম্ভাবনাও আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই উপলক্ষে বুধবার শান্তিনিকেতনের সেন্ট্রাল অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ।
সেখানে তিনি বলেন, 'এই উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম। বিভিন্ন সংস্থা থেকে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। এখনও পর্যন্ত ৭৫টি সংস্থা সাড়া দিয়েছে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী। এর উদ্দেশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, শিল্প ও সংস্কৃতি ও বিশ্বভারতীর শক্তি বহির্বিশ্বে তুলে ধরা এবং তাদের সকলকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সচেতন করা।' অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। অতিথিরা এই অনুষ্ঠানের প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন। বিভিন্ন সংস্থা ও ইন্ডাস্ট্রির তরফে ১২টি স্টল করা হচ্ছে। বিশ্বভারতী পাঁচটি স্টল করবে। প্রথম সেশনে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, প্লেসমেন্ট বোর্ড, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ইন্টার্নশিপ ও স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ-এর মতো বিষয়গুলি থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ক্যাম্পাসে রতন কুটির ও সেইল গেস্ট হাউস রয়েছে। যেগুলি অতীতে রতন টাটা ও সেইল কর্তৃপক্ষ তৈরি করে দিয়েছিলেন। তাই এবারের এই কর্মকান্ডে অন্যান্য সংস্থাকেও এই ধরনের কর্মকাণ্ড করার জন্য আহ্বান জানানো হবে। কারণ, বিশ্বভারতীতে ১০ হাজারের বেশি পড়ুয়া পড়াশোনা করছেন। তাঁদের জন্য হস্টেল বা অতিথিদের জন্য গেস্ট হাউস বা অতিথিশালা তৈরিতে কোনও শিল্প সংস্থা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমাদেরই উপকার হবে। এমনকী হেরিটেজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও সংস্থাগুলিকে জানানো হবে।
