আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদের সুতি থানার অন্তর্গত হারুয়া পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্যের বাড়ি লক্ষ্য করে পরপর গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন ওই পঞ্চায়েতেরই এক সিপিএম সদস্য। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই পঞ্চায়েত সদস্যের ভাইপোকেও। ধৃতদের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল এবং দু'রাউন্ড তাজা কার্তুজ। অভিযুক্তদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে বৃহস্পতিবার তাদের জঙ্গিপুর আদালতে পেশ করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই পঞ্চায়েত সদস্যের নাম হাজারী শেখ। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে  তিনি হারুয়া পঞ্চায়েতের মন্ডলপাড়া বুথ থেকে সিপিএমের প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন। হাজারী শেখের ভাইপো ইন্দাদুল শেখও এলাকায় বাম সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
 
  
 
 ধৃত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বুধবার সন্ধ্যে নাগাদ মত্ত অবস্থায় তাঁরা হাজারীর বাড়ির ছাদের উপর ওঠেন এবং সেখান দাঁড়িয়ে হারুয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য রেজাউল শেখকে লক্ষ্য করে গালাগালি দেওয়া শুরু করেন। রেজাউল কোনও উত্তর না দেওয়ায়, কাকা এবং ভাইপো দু'জনেই তাঁর বাড়ির লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানান, ঘটনার খবর পাওয়ার পরই রাতে আমরা ওই এলাকায়  অভিযান চালাই।  সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হাজারী এবং তার ভাইপো ইন্দাদুলকে। ধৃতদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। 
আরও পড়ুন: সোহনের বিরহে মৃত্যু সোহিনীর! ঝড়খালি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে শোকের ছায়া
২৬ আসন বিশিষ্ট হারুয়া পঞ্চায়েতে গত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ১২টি আসনে জয়ী হয়। কংগ্রেস ৮ টি , বিজেপি দু'টি, সিপিএম তিনটি এবং আরএসপি-র দখলে যায় একটি আসন। বাম এবং বিজেপির পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সাহায্য নিয়ে তপশিলি মহিলা জাতিদের জন্য সংরক্ষিত ওই পঞ্চায়েতের প্রধান পদে বসেন কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী রাখি রবিদাস।
হারুয়া অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কটা শেখ বলেন,'হারুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রব্বুলের মোড়ের কাছে বাড়ি হাজারী শেখের। তার বাড়ি থেকে মাত্র চল্লিশ মিটার দূরে তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য রেজাউল শেখের বাড়ি। বুধবার সন্ধ্যে নাগাদ হঠাৎই হাজারী , তাঁর ভাইপো ইন্দাদুল এবং আরও কয়েকজন রেজাউলকে লক্ষ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। সেই সময় রেজাউল বাড়িতে ঢুকে গেলে বাম পঞ্চায়েত প্রতিনিধি এবং তাঁর দলবল রেজাউলের বাড়ি লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। গুলি চালানোর শব্দ শুনতে পেয়ে পঞ্চায়েত সদস্যর বাড়ির লোকেরা ঘরের মধ্যে ঢুকে যাওয়ায় কারও গুলির আঘাত লাগেনি। কোনওক্রমে তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন।'
আরও পড়ুন: চাকরিহারাদের জন্য আইনি পথে ব্যবস্থা, শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে বললেন মমতা
 
  
 
 তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি দাবি করেন,' কংগ্রেসের তিনজন পঞ্চায়েত প্রতিনিধি এবং সিপিএমের একজন পঞ্চায়েত প্রতিনিধি তৃণমূল কংগ্রেসে  যোগ দেওয়ায় বর্তমানে ওই পঞ্চায়েতে আমাদের  ১৬ জন সদস্য রয়েছেন। উল্টো দিকে কংগ্রেস পরিচালিত বিরোধী জোটের হাতে দশ জন সদস্য রয়েছেন। ওই পঞ্চায়েতের সমস্ত উপ-সমিতি  বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস দখল করেছে। এর ফলে পঞ্চায়েত প্রধান নিজের ইচ্ছামত সেখানে কাজ করতে পারছেন না।  তাঁর দুর্নীতি আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।'
 
  
 
 কটা শেখ আরও বলেন,'খুব শীঘ্রই বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা এনে তাঁকে সরিয়ে দিতে পারি, এই আশঙ্কায় এলাকাবাসীকে সন্ত্রস্ত করার জন্য পঞ্চায়েত প্রধান এবং তাঁর স্বামী সঞ্জয় রবিদাস সমস্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য এবং এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করছেন।  তাঁদের নির্দেশেই গতকাল হাজারী শেখ এবং তাঁর দলবল আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করে আমরা ইতিমধ্যেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।'
 
  
 
 যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের তোলা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সঞ্জয় রবিদাস।  তিনি বলেন,'যে গ্রামে গুলি চালানোর ঘটনা হয়েছে সেখান থেকে আমরা অনেকটা দূরে থাকি। কেন ওই ব্যক্তি গুলি চালিয়েছে সে বিষয়ে আমার কোনও ধারনা নেই। তবে ওই গ্রামে  দীর্ঘদিন ধরেই দু'টি গোষ্ঠীর পুরনো লড়াই রয়েছে। সেকারণে এই ঘটনা কিনা তা আমি বলতে পারব না।'
