আজকাল ওয়েবডেস্ক: জেমন বন্ডের সিনেমা দেখে সবাই থ্রিল অনুভব করি। কারণ গুপ্তচরদের জীবন অনেক বেশী ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনেক অনুপ্রেরণা জোগায়। আজকের প্রতিবেদনে এমনই এক গুপ্তচরের কথা তুলে ধরা হবে। সেই গুপ্তচরে জীবন অনেকটা সত্যি, ঝুঁকিপূর্ণ। পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত জঙ্গি কীভাবে ভারতীয় সেনার অন্যতম ভরসার আন্ডারকভার এজেন্ট হয়ে উঠলেন তার গল্প তুলে ধরা হবে এখানে। 

৫৬ বছর বয়সী মুশতাক বর্তমানে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় শান্ত জীবনযাপন করেন। জোয়ান বয়সে লোকেরা তাঁকে অনেক নামে ডাকতেন- জেমস বন্ড, রোমিও এবং ইশফাক। মুশতাক বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য গোপনে কাজ করেছিলেন। বন্দুক নিয়ে তাঁর ৩৬ বছরের দীর্ঘ যাত্রায়, তিনি ৩০০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসীকে নির্মূল করতে সাহায্য করেছিলেন। তাঁর জীবন সাহস এবং ত্যাগের এক শক্তিশালী গল্প।

মুশতাক আহমেদ ভাট কাশ্মীরের পুলওয়ামার একটি ছোট্ট গ্রাম জাওসুতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালের শেষের দিকে যখন উপত্যকায় হিংসা চরমে ছিল তখন তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেন। কংগ্রেসের সমর্থনকারী পরিবার থেকে পরিবারে সন্তান মুশতাক সেই সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির নিশানা হয়ে ওঠেন। কোনও সরকারি সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা বাহিনী সাহায্য না পাওয়ায় মুশতাক মনে করেছিলেন যে অস্ত্র তুলে নেওয়াই নিজেকে এবং তাঁর পরিবারকে রক্ষা করার একমাত্র উপায়।

১৯৮৯ সালে তিনি পাকিস্তানে চলে যান এবং সেখানে আফগান যুদ্ধবাজদের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তালিবানদের সঙ্গে আফগানিস্তানে আহমদ শাহ মাসুদের উত্তর জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৯০ সালের মধ্যে  মুশতাক একজন প্রশিক্ষিত জঙ্গি হিসেবে কাশ্মীরে ফিরে আসেন এবং জামাত-ই-ইসলামি সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিনে যোগ দেন। কিন্তু পাকিস্তানে উদ্দেশ্য তাঁকে গভীরভাবে হতাশ করেছিল। তিনি বলেন, "আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে পাকিস্তান কেবল নিজের স্বার্থের জন্য কাশ্মীরের স্বাধীনতার ধারণা ব্যবহার করছে।" ১৯৯৪ সালে তিনি সিদ্ধান্ত চরম সিদ্ধান্ত নেন। মুশতাক গোপনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য কাজ শুরু করেন। একজন আন্ডারকভার এজেন্ট হিসেবে জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেন।

আরও পড়ুন: ১৫ বছরে ৪৫ লক্ষ গুণ রিটার্ন! বিটকয়েনে দু’টাকা বিনিয়োগ করলে আজ আপনিও হতে পারতেন কোটিপতি

এরপরেই জঙ্গিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাঁদেরই একজন হয়ে কাজ করা শুরু করেন মুশতাক। এর পাশাপাশি, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করে দিতেন। অনেকেরই ধারণা, প্রায় ১০০ জঙ্গিকে ভারতের খোচর হিসেবে কাজ করতে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন মুশতাক। তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলির মধ্যে একটি ছিল চার বার পাকিস্তানে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। এই অভিযানগুলির মধ্যে একটি ১৯৯৯ সালের কার্গিল অনুপ্রবেশ সম্পর্কে আগাম খবর ভারতকে প্রস্তুতির জন্য সময় দিয়েছিল। 

মুশতাক জানিয়েছেন, ১৯৯৪ সালের পর তিনি আর কখনও ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করেননি। তিনি বলেন, "আমার কাজ ছিল গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া। সেনাবাহিনীকে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য দিয়ে জীবন বাঁচানো।" তিনি আরও জানিয়েছেন, তাঁর কাজ ৩০০ জনেরও বেশি জঙ্গিকে নির্মূল করতে এবং ৫০০ জনেরও বেশি তরুণকে সঠিক পথে ফিরে আসতে সাহায্য করেছিল। 

আরও পড়ুন: ফুয়েল ‘কাট অফ’ করলে কেন? এক পাইলটকে প্রশ্ন অপরের, আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্টে ঘনাচ্ছে রহস্য

১৯৯৯ সালে মুশতাক গোপন পরিচয় উন্মোচিত হয়ে। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে টেরিটোরিয়াল আর্মির ১৬২তম ব্যাটালিয়নের অংশ করে। তাঁর সাহস এবং সেবার জন্য, ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁকে জুনিয়র কমিশনড অফিসার (জেসিও) হিসাবে সরাসরি পদে বসান। ২০২১ সালে অবসর নেওয়ার আগে ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় ছিলেন। ক্রমাগত প্রাণের ঝুঁকি সত্ত্বেও ভারত ছেড়ে যাননি তিনি। মুশতাকের এক মেয়ে ডাক্তার, এক ছেলে কানাডায় থাকেন এবং অন্য এক ছেলে তাঁর সঙ্গে কাশ্মীরেই থাকেন। ছেলে তাঁকে কানাডায় চলে আসতেও বললেও সেখানে যেতে চান না মুশতাক। তিনি জানিয়েছেন, আমার কাজ এখনও শেষ হয়নি। অনেক যুবককে এখনও সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা বাকি রয়েছে।