আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার সকাল থেকেই জল্পনা ছিল। সেই জল্পনাতেই শিলমোহর। সাত বছর পর, 'নিজের ঘর' তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরলেন শোভন চ্যাটার্জি। সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দলীয় উত্তরীয় গায়ে জড়িয়েই, তৃণমূল ভবন থেকে তাঁদের গন্তব্য কালীঘাট। সূত্রের খবর, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তাঁরা। সূত্রের খবর, শোভনের দলীয় দায়িত্ব নিয়ে আজই বড় সিদ্ধান্তের কথা সামনে আসার সম্ভাবনা।
সোমবার, তৃণমূল ভবনে সুব্রত বক্সি, অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে ঘাসফুলের উত্তরীয় গায়ে জড়ালেন তাঁরা। অরূপ বিশ্বাস এদিন বলেন, শোভন-বৈশাখী, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মযজ্ঞে সামিল হওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন দলের কাছে। সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমোদন ক্রমেই দলে অন্তভূর্ক্তি তাঁদের। বৈঠক শেষে শোভন-বৈশাখী কালীঘাটে অভিষেকের সঙ্গে দেখা করবেন, সেকথাও জানান অরূপ বিশ্বাস। সুব্রত বক্সি বলেন, 'মমতা ব্যানার্জির নির্দেশ মেনেই, প্রাক্তন মেয়র, প্রাক্তন মন্ত্রী যোগ দিচ্ছেন দলে। সঙ্গে রয়েছেন বৈশাখী ব্যানার্জি। তাঁকেও স্বাগত জানাই।'
কী বলছেন শোভন নিজে?
তৃণমূলে ফিরে আপ্লুত শোভন। তিনি বলেন, 'আমার ধমনী, শিরা, তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল আমার নিজের ঘর, সংসার। পুনরায় এর সঙ্গে সামিল হলাম, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার জন্য।' আগামী দিনে, দলের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক ব্যানার্জি যেভাবে চাইবেন, দলের জন্য, সবরকম কাজ করবেন। কোনও ত্রুটি রাখবেন না কর্তব্য পালনে, সেকথাও বলেন এদিন।
২৫ সেপ্টেম্বর, ১৭ অক্টোবর, ৩ নভেম্বর। প্রথম দু'দিন যেন পথ তৈরি, শেষ দিনের। ২৫ সেপ্টেম্বর, অভিষেকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় শোভন চ্যাটার্জির। সেদিন থেকেই রাজ্যের রাজনীতিতে জোর জল্পনা, শোভনের ঘর ওয়াপসি নিয়ে। মাঝে জল্পনা হয় মমতা-শোভন সাক্ষাৎ নিয়ে। ১৭ অক্টোবর শোভনের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন আরও স্পষ্ট হয় কিছুটা। ১৭ তারিখ ঘোষণা করা হয়, নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নতুন চেয়ারম্যান হলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।
শোভন চ্যাটার্জি। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। রাজনীতিতে বরাবর মমতা-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে, মতবিরোধ, মনকষাকষি থেকে দল ছেড়েছিলেন শোভন। ২০১৯ সালে ১৪ আগস্ট বিজেপিতে যোগদান করেন। তবে গেরুয়া শিবিরে খুব বেশিদিন ছিলেন না। নানা কারণে, প্রায় দু' বছরের মাথায়, ২০২১ সালে পদ্মশিবির থেকে সরে যান তিনি। মাঝে নানা মত নিয়ে বিতর্ক, পরেও নজর থেকেছে তাঁর গতিবিধির দিকে।
জল্পনা তীব্র হয়, সেপ্টেম্বরে অভিষেক-সাক্ষাতের পর। সাক্ষাতের পর, আজকাল ডট ইন-কে শোভন জানিয়েছিলেন, 'এই সাক্ষাৎ একেবারেই হঠাৎ নয়। অভিষেকের পরিবারের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। আমি নিজেকেও ওই পরিবারের অংশ মনে করি। মমতাদিই তো আমাকে আমার সামগ্রিক অবস্থান, পরিচিতি সব দিয়েছে। আমি মমতাদির পরিবার এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ।' সেদিনই শোভন জানিয়েছিলেন, তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, দলের যে কোনও কাজে, পরিবারের অংশ হিসেবে যুক্ত হতে। তিনি বলছেন, 'আমি তো আগ্রহ প্রকাশ করেছি অবশ্যই। পুজোর আগের সাক্ষাৎ হলেও, রাজনীতি নিয়ে তো কথা হয়েছেই। যদি নির্দেশ আসে, তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও কাজে যুক্ত হওয়ার, আমি তাতে রাজি। আমি নিজেই আগ্রহ প্রকাশ করেছি।'
শুধু সাক্ষাৎ নয়, প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে, বলা যায় একেবারে গোড়ায় দিন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শোভন অভিষেকের রাজনীতিতে অভিষেকের সাক্ষী, দেখেছেন তাঁর পরিণতভাব, রাজনৈতিক বিকাশ এবং বিপুল দায়িত্ব সামলানো। বলেছিলেন, তিনি অভিষেককে দেখে বুঝতে পারেন, কেবল বড়দের থেকেই শিক্ষা নেওয়া যায় এমনটা নয়। অনেকসময় শেখা যায় ছোটদের থেকেও। তারপরেই ১৭ সেপ্টেম্বর জানা যায়, নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নতুন চেয়ারম্যান হলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সোমবার, তিনি তৃণমূলে ফিরলেন, সাত বছর পর, বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়েই।
