শীত পড়লেই যেন শরীরের এনার্জি কোথায় হারিয়ে যায়! সকালে বিছানা ছাড়তে মন চায় না, দিনের বেলায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাই ওঠে, মনে হয় ঘুম যেন শেষই হচ্ছে না! এই ঋতুতে এমনটা শুধু আপনার নয়, প্রায় সকলেরই হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে প্রকৃতি ও শরীরের ছন্দের গভীর সম্পর্ক।
শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে আসে। ফলে শরীর কম সূর্যালোক পায়, যার প্রভাব পড়ে আমাদের “সার্কেডিয়ান রিদম” বা শরীরের ঘুম-জাগরণের প্রাকৃতিক ঘড়িতে। আলো কম পেলে শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা ঘুমঘোর ও ক্লান্তি তৈরি করে। একে বলা হয় ‘উইন্টার ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম’।
এছাড়া সূর্যের আলোয় শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। শীতে সূর্যালোক কম থাকায় ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, যা ক্লান্তি, মাংসপেশির দুর্বলতা ও মন খারাপের কারণ হয়। একই সঙ্গে ঠাণ্ডার কারণে অনেকেই ঘরে থাকেন, ব্যায়াম কম হয়, শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। ফলে আরও অলস লাগে।
মনোবিজ্ঞানীরাও বলছেন, সূর্যের আলো কম পেলে ‘সেরোটোনিন’ নামক হরমোনের পরিমাণ কমে যায় যা আমাদের মুড নিয়ন্ত্রণ করে। এই সময় অনেকের 'উইন্টার ব্লুজ' বা হালকা বিষণ্ণতা দেখা দেয়। এই মানসিক অবস্থা থেকেও ঘুমের ভাব ও কর্মক্ষমতা কমে যায়।
তবে এই সমস্যা কাটানো সম্ভব কিছু সহজ পরিবর্তনের মাধ্যমে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পর্দা সরিয়ে সূর্যের আলো ঢুকতে দিন। কয়েক মিনিটের জন্য হলেও বাইরে হাঁটুন। প্রাকৃতিক আলো ও হালকা ব্যায়াম শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনে। এছাড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগার অভ্যাস বজায় রাখলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি ঠিক থাকে।
খাবারেও সচেতন হওয়া দরকার। বেশি তেল-চর্বিযুক্ত ভারী খাবার না খেয়ে হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খান, যেমন ওটস, ডিম, ডাল, শাকসবজি ও ফল। পর্যাপ্ত জল পান করাও জরুরি। কারণ শীতে তৃষ্ণা কম থাকলেও শরীরের জলের প্রয়োজন একই থাকে।
চিকিৎসকদের মতে, শীতকালে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ঘুম ভাব যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে রক্তে ভিটামিন ডি বা থাইরয়েড পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ এই ঘাটতিগুলো অনেক সময় লুকিয়ে থাকা ক্লান্তির মূল কারণ হতে পারে।
