আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানুষের জীবনের এক চিরন্তন প্রশ্ন, ভাল মানুষের সঙ্গেই কেন বারবার খারাপ ঘটনা ঘটে? যারা সৎ, দয়ালু, ন্যায়পরায়ণ, তারাই কেন দুঃখ, রোগ, অন্যায় বা ব্যর্থতার শিকার হন? এই প্রশ্ন শুধু আধুনিক সমাজেই নয়, হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের মনকে আলোড়িত করে আসছে। এই প্রশ্নের গভীর ও দার্শনিক উত্তর রয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায়।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সরাসরি বলে না যে ভাল হলে শুধু ভালই ঘটবে। বরং গীতা আমাদের জীবনের বাস্তব সত্যটি বুঝতে শেখায়। গীতার মূল ধারণাগুলোর একটি হল কর্মতত্ত্ব। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, মানুষের অধিকার শুধু কর্ম করার ওপর, ফলের ওপর নয়। আজ যে দুঃখ আমরা ভোগ করছি, তা অনেক সময় এই জন্মের নয়, পূর্বজন্মের কর্মফলের কারণ হতে পারে। তাই একজন ভাল মানুষ বর্তমান জীবনে ভাল হলেও, অতীতের কর্মের প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত নাও হতে পারে।

গীতা আরও বলে, এই পৃথিবী দুঃখের স্থান এবং ক্ষণস্থায়ী। এখানে সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, মান-অপমান সবই আসবে যাবে। ভাল মানুষ হওয়া মানেই দুঃখ আসবে না, এমন কোনও প্রতিশ্রুতি গীতা দেয় না। বরং গীতা শেখায় দুঃখের মধ্যেও কীভাবে স্থির ও সচেতন থাকা যায়।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল আসক্তিহীনতা। আমরা যখন নিজেদের ‘ভাল মানুষ’ ভাবি, তখন অনেক সময় এর সঙ্গে প্রত্যাশা জুড়ে দিই যে, আমার সঙ্গে খারাপ হওয়া উচিত নয়। কিন্তু গীতা বলে, এই প্রত্যাশাই দুঃখের মূল কারণ। শ্রীকৃষ্ণ বলেন, যে ব্যক্তি সুখ ও দুঃখে সমান থাকে, সে-ই প্রকৃত জ্ঞানী। ভাল মানুষ হওয়া মানে দুঃখ এলে ভেঙে পড়া নয়, বরং তা থেকে শিক্ষা নেওয়া।

গীতা আরও ব্যাখ্যা করে যে অনেক সময় দুঃখ আসে আত্মিক উন্নতির জন্য। যেমন আগুনে সোনা পরিশুদ্ধ হয়, তেমনি কষ্ট মানুষের ভিতরের শক্তি, ধৈর্যকে জাগ্রত করে। অনেক মহান মানুষই জীবনের কঠিন সময় থেকেই সত্যিকার অর্থে নিজেদের আবিষ্কার করেছেন।

সবশেষে গীতা আমাদের শেখায় এই জীবনই চূড়ান্ত নয়। আত্মা অবিনশ্বর। শরীরের কষ্ট বা জীবনের বিপর্যয় আত্মার ক্ষতি করতে পারে না। এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে দুঃখের মাঝেও আশাবাদী ও নির্ভীক করে তোলে।

ভগবদ্গীতা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেয় দুঃখ এড়ানো নয়, দুঃখকে বোঝা, গ্রহণ করা এবং তার ঊর্ধ্বে ওঠাই হল সত্যিকার জ্ঞান।