আজকাল দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ, অনিদ্রা, ব্যস্ততা বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সব মিলিয়ে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোনকে বলা হয় স্ট্রেস হরমোন, যা শরীরকে বিপদের সময় সজাগ থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন কর্টিসল দীর্ঘদিন ধরে বেশি থাকে, তখন তা শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলেই কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিশেষ করে কিছু খাবার ও অভ্যাস শরীরে প্রাকৃতিকভাবে শান্তি ফেরাতে ও মনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
১. রঙিন ফল ও সবজি রাখুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়ঃ বিভিন্ন রঙের ফল ও সবজি যেমন বেরি, ব্রকলি, পালং শাক, বেল পেপারে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও পলিফেনল থাকে। এটি শরীরে জমে থাকা ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের প্রদাহ কমায়, যা সরাসরি কর্টিসল কমাতে সহায়ক।
২. সীমিত পরিমাণে খান ডার্ক চকোলেটঃ বিশেষজ্ঞরা জানান, ৭০% বা তার বেশি কোকো সমৃদ্ধ ডার্ক চকোলেট শরীরে ফ্ল্যাভোনয়েড সরবরাহ করে, যা মানসিক চাপ কমায়। অতিরিক্ত না খেয়ে প্রতিদিন এক টুকরো ডার্ক চকোলেট খেলে তা প্রাকৃতিকভাবে মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে।
৩. গোটা শস্যজাতখাবারঃ ওটস, ব্রাউন রাইস, কিনোয়ার মতো খাবারে থাকা ফাইবার রক্তে চিনির ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ ওঠা-নামা করলে শরীর কর্টিসল উৎপাদন করে। ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে যা মানসিক সুস্থতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
৪. গ্রীন টি পান করুনঃ গ্রীন টি-তে থাকা এলথিয়ানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড মস্তিষ্কে প্রশান্তি আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কর্টিসলের মাত্রা কমায় এবং ঘুমের গুণমান উন্নত করে। প্রতিদিন সকাল বা বিকেলে এক কাপ গরম গ্রিন টি মন ও শরীরকে শান্ত রাখে।
৫. প্রোবায়োটিক খাবার রাখুনঃ অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে গভীর সংযোগ রয়েছে। দই, কিমচি, কাফির, ইডলি, আচার ইত্যাদির মতো ফারমেন্টেড খাবারে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের ভারসাম্য ঠিক রাখে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক নিয়মিত খেলে মেজাজ উন্নত হয়, ঘুম ভাল হয় এবং কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খানঃ ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার যেমন স্যামন মাছ, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড ইত্যাদি মস্তিষ্কে প্রদাহ কমায় এবং কর্টিসল নিঃসরণ কমায়। এই স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মুড স্ট্যাবিলাইজার হিসেবেও কাজ করে।
৭. পর্যাপ্ত জল পান করুনঃ অনেক সময় অল্প পরিমাণ ডিহাইড্রেশনও কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস জল পান করা উচিত। শরীর হাইড্রেটেড থাকলে মেটাবলিজম ও হরমোনের ভারসাম্য স্বাভাবিক থাকে।
৮. খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন আনুনঃ শুধু কী খাচ্ছেন তাই নয়, কীভাবে খাচ্ছেন তাও কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও ধীরে ধীরে ও মনোযোগ দিয়ে খান। খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। খিদে পেলেই খান এবং পরিমিত খাওয়া শেষে থামুন। এই অভ্যাসগুলো 'মাইন্ডফুল ইটিং'–এর অংশ যা শরীরের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে।
মনে রাখবেন, স্ট্রেস কমাতে শুধু মেডিটেশন বা ব্যায়াম নয়, সঠিক খাবারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকে ভাল রাখতে প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে, প্রাকৃতিক ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন। এতে কর্টিসল স্বাভাবিক থাকবে, ঘুম ভাল হবে, আর মনও থাকবে শান্ত।
