চিকিৎসাবিজ্ঞান যে আজ কতটা এগিয়ে গিয়েছে তার উদাহরণ মিলেছে সাম্প্রতিক একটি ঘটনায়। ইজরায়েলে ঘটেছে এমন এক বিস্ময়কর ঘটনা, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তুমুল আলোড়ন তৈরি করেছে। স্বামীর মৃত্যুর দেড় বছর পর সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক মহিলা। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি এই ঘটনাকে বাস্তবে সম্ভব করেছে বাস্তবে। আবেগ, বিজ্ঞান ও আইনি লড়াই মিলিয়ে এই ঘটনা এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

২০২৫ সালের জুন মাসে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন ৩৫ বছর বয়সী ডাঃ হাদাস লেভি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁর স্বামী নেতানেল সিলবার্গ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মারা যান। এরপরই বদলে যায় লেভির জীবন, কিন্তু সঙ্গীর সঙ্গে ভবিষ্যৎ গড়ার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তা ভুলতে পারেননি। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মৃত স্বামীর সন্তানের জন্ম দেবেন। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে পিএমএসআর (পোস্ট-মার্টেম স্পার্ম রিট্রিভাল) নামের এক আধুনিক প্রযুক্তি। 


ঠিক কী এই পদ্ধতি? এক্ষেত্রে মৃত পুরুষের দেহ থেকে মৃত্যুর কিছু সময়ের মধ্যে শুক্রাণু সংগ্রহ করা যায় এবং তা বিশেষ পন্থায় সংরক্ষণ করে পরে আইভিএফ-এর মাধ্যমে মহিলার শরীরে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা জানান, মৃত্যুর ২৪–৩৬ ঘণ্টার মধ্যে শুক্রাণু সংগ্রহ করা গেলে তা বহু বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে।

লেভির ক্ষেত্রে ঠিক এইভাবেই সংগ্রহ করা শুক্রাণু ব্যবহার করে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। আইভিএফ প্রক্রিয়ায় সাফল্যের পর শুরু হয় তাঁর আইনি লড়াই। কারণ মৃত ব্যক্তির শুক্রাণু ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে কঠোর নিয়ম। নেতানেল স্বামীর জীবদ্দশায় পরিবার গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আর সেই কারণেই আদালত তাঁর যুক্তি বিবেচনা করে সন্তানধারণের অনুমতি দেয়।

দেড় বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা, চিকিৎসা ও মানসিক লড়াই শেষে লেভি এক সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন। সন্তানের জন্মের পর লেভির আবেগঘন বার্তা, “নেতানেল আজ থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। এই শিশুর মাধ্যমে তাঁর স্বপ্ন আজ বেঁচে রইল।” এদিকে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা। কেউ বলছেন, এটি বিজ্ঞান ও মানবিকতার দুর্দান্ত জয়,  কেউ আবার নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু একথা অস্বীকার করা যায় না, পিএমএসআর প্রযুক্তি যে মানুষকে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে, যেখানে প্রিয়জনের মৃত্যুর পরও ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ থেকে যায়।চিকিৎসকদের মতে,  “এ ধরনের প্রযুক্তি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আইনি অনুমতি ও মৃত ব্যক্তির সম্মতি থাকলেই কেবল এটি করা উচিত।”