অনেকেরই দেখা যায়, পেট ভরে খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আবার খিদে পেয়ে যায়। এই অদ্ভুত অনুভূতি থেকে অকারণে স্ন্যাকস খাওয়া, মিষ্টি বা জাঙ্ক ফুডের  প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। ফলে ওজন বৃদ্ধি, গ্যাস-অম্বল, ক্লান্তি এমনকী পরের খাবারে ওভারইটিংয়ের মতো সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ শুধু খাবার নয়, বরং আমাদের অভ্যাস, হরমোন এবং খাবারের গঠনই নির্ধারণ করে আমরা আসলে কতক্ষণ তৃপ্ত থাকব।

এই সমস্যার প্রথম কারণ হল ফাইবার ও প্রোটিনের ঘাটতি। যখন খাবারে শুধু ভাত-রুটি বা কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে, কিন্তু ডাল-ডিম-দই-সবজি কম থাকে, তখন পেট ভরলেও শরীর দ্রুত আবার খাবার চাইতে শুরু করে। প্রোটিন এবং ফাইবার পেট অনেকক্ষণ ভরা রাখে এবং হঠাৎ খিদে কমায়। তাই প্রতিটি খাবারেই এগুলো থাকা জরুরি।

দ্বিতীয়ত, অনিয়মিত খাওয়ার সময়। দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকার পর আমরা পরের খাবারে বেশি খেয়ে ফেলি, কিন্তু তবুও শরীর ‘পেট ভরেছে’ বলে বুঝতে সময় নেয়। ফলে দ্রুত খিদে ফিরে আসে। দিনের তিন বেলার খাবার নির্দিষ্ট সময়ে খেলে শরীরের ক্ষুধা-তৃপ্তির চক্র ঠিক থাকে।

তৃতীয় কারণ জলের অভাব। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক সময় তেষ্টাকেই আমরা খিদে বলে মনে করি। খাওয়ার আগে এক গ্লাস জল বা লেবুর জল পেটে ভরার অনুভূতি বাড়ায়, যা ওভারইটিং কমায়।

চতুর্থ অভ্যাস হল বিক্ষিপ্ত হয়ে খাওয়া অর্থাৎ টিভি দেখার সময়, মোবাইল স্ক্রল করতে করতে বা কাজের ফাঁকে খাওয়া। এভাবে খেলে মস্তিষ্ক খাবারের পরিমাণ বুঝতে পারে না। ফলে ‘পুরোপুরি তৃপ্ত’ হওয়ার সংকেত পেতে দেরি হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, খাওয়ার সময় শুধু খাওয়া, অন্য কিছু নয়।

পঞ্চম কারণ দ্রুত খাওয়া। দ্রুত খেলে খাবার ঠিকমতো চিবিয়ে খাওয়া হয় না। ফলে হরমোনের ভারমাস্য মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সময় লাগে। ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে পেট তাড়াতাড়ি ভরে এবং কম খাবারেই তৃপ্তি পাওয়া যায়।

ওভারইটিং ঠেকাতে কী করবেন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিনের খাবারে ডাল, সবজি, ডিম, দই এবং ফল রাখুন। খাওয়ার আগে এক গ্লাস জল পান করুন। ছোট প্লেটে খাবার নিন, এতে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। রাতের খাবার হালকা রাখুন এবং দিনের মাঝে ছোট-ছোট স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস নিন। আর সবচেয়ে জরুরি, ব্যস্ততার মাঝেও খাওয়ার সময় মনোযোগ দিন।সঠিক অভ্যাস তৈরি হলে ‘খাওয়ার পরও খিদে‘-এই সমস্যা অনেকটাই কমে যায়, ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।