মিষ্টি বা অতিরিক্ত চিনি খেলেই দাঁতে ছিদ্র হয়, দীর্ঘদিন দাঁতের ক্ষয় বা ক্যাভিটি নিয়ে প্রচলিত ধারণা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। দাঁতের ক্ষয়ের জন্য কেবল চিনি নয়, আরও একাধিক খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক অবস্থাও দায়ী হতে পারে। যেমন-

•    কার্বোহাইড্রেট এবং স্টার্চ জাতীয় খাবারঃ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন স্টার্চ জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, পাস্তা এমনকী কিছু ফল চিবানোর ফলে সরল শর্করায় ভেঙে যায়। মুখের ব্যাকটেরিয়া চিনির মতো এই সব প্রাকৃতিক সুগারের সঙ্গে মিশে এনামেলের ক্ষতিকারক অ্যাসিড তৈরি করে। গবেষণা বলছে. চিটচিটে অথবা রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতুল এগুলো দাঁতের মাঝে আটকে যায় এবং দীর্ঘক্ষণ ব্যাকটেরিয়া অ্যসিড তৈরি করতে সাহায্য করে। 

আরও পড়ুনঃ রোগা হতে ডায়েট, ক্যালোরি কাউন্ট সব ভুলে যান! এই জাপানি কৌশল মেনে চললেই অল্প দিনে মিলবে সেরা ফল

•    অ্যাসিডিক খাবার ও পানীয়ঃ ব্যাকটেরিয়া ছাড়াই অ্যাসিড থেকে সরাসরি এনামেল ক্ষয়ের কারণেও দাঁতে ক্যাভিটি তৈরি হতে পারে। সফট ড্রিঙ্ক, ফ্রুট জুস, ভিনিগারযুক্ত খাবার, টমেটো, টক ফল এনামেলকে দুর্বল করে দেয়, ফলে দাঁত দ্রুত ক্ষয়ে যায়।  


•    ড্রাই মাউথ এবং স্যালিভা কমে যাওয়াঃ মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যের জন্য লালা বা স্যালিভা বড় ভূমিকা পালন করে। এটি অ্যাসিডকে ভেঙে দেয়, দাঁতের থেকে খাবারের অংশ পরিষ্কার করে এবং ক্যালশিয়াম, ফসফেটের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে যা এনামেল পুনরায় গঠন করতে পারে। তাই লালার অভাব হলে ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব দ্বিগুণ হয়, দাঁতের ক্ষতি হওয়ার আসঙ্কা বাড়ে। ডিহাইড্রেশন, দুশ্চিন্তা, নির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়া সহ বিভিন্ন কারণে ডিহাইড্রেশন হলে ড্রাই মাউথ হতে পারে। যা ক্যাভিটির ঝুঁকি বাড়ায়।

•    খারাপ ওরাল হাইজিনঃ খারাপ ওরাল হাইজিন মানে নিয়মিত দাঁত না মাজা বা ফ্লস না করা। যার কারণে প্লাক জমে গিয়ে দাঁতের ক্ষয় বাড়ায়।

•    ঘন ঘন খাওয়াঃ শুধু আপনি কী খাচ্ছেন নয়, কতক্ষণ অন্তর খাচ্ছেন তাও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যতবার আমরা খাবার খাই অথবা জল ছাড়া অন্য কোনও পানীয় পান করি, ততবারই দাঁতের উপর অ্যাসিডের প্রভাব পড়ে যা ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকে। তাই ঘন ঘন খাদ্যাভাস দাঁতের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। 


প্রতিরোধের উপায়

দাঁতের ক্ষয় এড়াতে শুধু মিষ্টি এড়ালেই হবে না, সার্বিকভাবে মুখের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন

•    দিনে অন্তত দু’বার দাঁত মাজুন, তবে খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়।
•    প্রতিদিন ফ্লস ব্যবহার করুন।
•    ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
•    খাওয়ার পর প্রচুর জল পান করুন এবং চাইলে বিশেষ ধরনের চিউইং গাম খেতে পারেন  যা লালা বাড়াতে সাহায্য করে।
•    নিয়মিত দন্তচিকিৎসকের কাছে চেকআপ করুন,যাতে সমস্যা শুরুর আগেই ধরা পড়ে।

দাঁতের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত মুখের যত্ন এবং দন্ত চিকিৎসকের নজরদারি। চিনিই দাঁতের ক্ষয়ের একমাত্র কারণ নয় তা স্পষ্ট। তের যত্ন মানেই কেবল মিষ্টি এড়ানো নয়, বরং জীবনধারার প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।