আড্ডা হোক বা তর্ক, মুখ খুললেই বেড়িয়ে পড়ে গালিগালাজ! বিড়ম্বনায় পড়তে হয়? নতুন একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মুখ ফসকে দু’-চারটে কড়া কথা বেরিয়ে গেলে কোনও ক্ষতি নেই। বরং তাতে শরীর আশ্চর্যজনকভাবে বেশি শক্তি আর সহনশীলতা দেখাতে পারে। চাপের মুহূর্তে লুকিয়ে থাকা ক্ষমতাও যেন জেগে ওঠে।
সেই গবেষণার প্রধান লেখক ডা. রিচার্ড স্টিফেন্স এক বিবৃতিতে বলেন, “গালাগালি করা একেবারে বিনা খরচে, ওষুধ ছাড়াই সহজলভ্য এমন একটি উপায়, যা প্রয়োজনের সময় আমাদের পারফরম্যান্স বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।”
এই গবেষণায় স্টিফেন্স ও তাঁর সহকর্মীরা মোট ১৯২ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে দু’টি পরীক্ষা চালান। প্রতিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের একটি ‘চেয়ার পুশ-আপ’ করতে বলা হয়। অর্থাৎ হাতের ভর দিয়ে শরীরের ওজন ধরে রাখা। এই সময় প্রতি দু’সেকেন্ড অন্তর তাঁদের হয় একটি গালাগালি, নয়তো একটি সাধারণ শব্দ উচ্চারণ করতে বলা হয়।
পুশ-আপ শেষ করার পর অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেন। সেখানে তাঁদের ইতিবাচক আবেগ, পরিস্থিতিটিকে কতটা মজার মনে হয়েছে, মন কতটা বিচলিত ছিল এবং নিজের উপর আত্মবিশ্বাস কেমন ছিল, এই বিষয়গুলি যাচাই করা হয়।
গবেষকদের বিশেষ আগ্রহ ছিল ‘ডিসইনহিবিশন’ বা আত্মসংযম কমে যাওয়ার দিকে। যে অবস্থায় মানুষ নিজেকে আটকে রাখে না। ফলাফল ছিল একেবারেই স্পষ্ট।
যাঁরা চেয়ার পুশ-আপ করার সময় গালিগালাজ করছিলেন, তাঁরা সাধারণ শব্দ বলা ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে শরীরের ওজন ধরে রাখতে পেরেছেন। এই ফলাফল আগের গবেষণাগুলিকেও সমর্থন করে, যেখানে দেখা গিয়েছে গালাগালি করলে শারীরিক পারফরম্যান্স বাড়তে পারে।
স্টিফেন্স বহু বছর ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় তিনি দেখেছিলেন, সাইক্লিস্টরা সাধারণ শব্দের বদলে গালিগালাজ গোছের শব্দ ব্যবহার করলে তাঁদের গ্রিপ স্ট্রেংথ ৮ শতাংশ এবং পাওয়ার আউটপুট ৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
অন্যান্য গবেষণাতেও দেখা গিয়েছে, ওয়াল সিট, সাধারণ পুশ-আপ বা প্ল্যাঙ্কের মতো ব্যায়ামের সময় গালাগালি করলে পারফরম্যান্সে উন্নতি হয়।
স্টিফেন্স বলেন, “এটি এখন বারবার প্রমাণিত, নির্ভরযোগ্য একটি ফলাফল। কিন্তু প্রশ্ন হল, গালিগালাজ করাটা কীভাবে আমাদের সাহায্য করছে? এর পিছনের মানসিক প্রক্রিয়াটা কী?”
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তাঁর দল সাম্প্রতিক দুই পরীক্ষার তথ্য আগের একটি গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে।
দেখা যায়, গালাগালি করলে পারফরম্যান্স বাড়ার মূল কারণ মানসিক। এতে মনোযোগ বাড়ে, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং ‘ফ্লো’-এর অনুভূতি জোরদার হয়।
স্টিফেন্সের কথায়, “অনেক পরিস্থিতিতেই মানুষ সচেতন ভাবে বা নিজের অজান্তেই নিজের পুরো শক্তি ব্যবহার করতে নিজেকে আটকায়।”
স্টিফেন্সের মতে, “গালাগালি এমন একটি সহজ জিনিস, যা মানুষকে আরও মনোযোগী, আত্মবিশ্বাসী এবং কম দ্বিধাগ্রস্ত হতে সাহায্য করে। যাতে সে নিজের সবটা দিতে পারে।”
এটাই শেষ নয়। কয়েকটি কড়া শব্দ ব্যবহার করলে ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতাও বাড়তে পারে।
২০০৯ সালের একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বরফঠান্ডা জলে হাত যতক্ষণ সম্ভব ডুবিয়ে রাখতে বলা হয়। সেই সময় তাঁরা হয় গালাগালি করছিলেন, নয়তো সাধারণ কোনও শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। দেখা যায়, গালাগালি করা ব্যক্তিরা শুধু বেশি সময় ব্যথা সহ্য করতে পেরেছিলেন তা নয়, তাঁদের কাছে ব্যথার অনুভূতিও তুলনায় কম ছিল।
অন্যান্য গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, গালাগালি সামাজিক সম্পর্ক মজবুত করতে পারে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং প্রত্যাখ্যান বা অবহেলার মানসিক যন্ত্রণাও কিছুটা কমাতে পারে।
ভবিষ্যতে স্টিফেন্স ও তাঁর সহকর্মীরা দেখতে চান, শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াও অন্য পরিস্থিতিতে, যেমন জনসমক্ষে কথা বলা বা রোমান্টিক সম্পর্কে এগিয়ে যাওয়ার সময় গালাগালি একইভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে কি না।
