আজকের দিনে মোবাইল খুললেই চোখে পড়ে ইনস্টাগ্রাম রিলস, শর্টস, একটার পর একটা ছোট ভিডিও। কয়েক সেকেন্ডের এই রিলস দেখতে দেখতে কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, তা অনেকেই টের পান না। কিন্তু জানেন কি অতিরিক্ত রিলস দেখা মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর? এমনকী এর প্রভাব নাকি মদ্যপান বা ধূমপানের থেকেও কয়েক গুণ বেশি, সাম্প্রতিক এক গবেষণা এমনই তথ্য উঠে এসেছে। 

গবেষকদের মতে, যারা নিয়মিত ও দীর্ঘ সময় শর্ট ভিডিও অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাঁদের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে আলাদাভাবে কাজ করতে শুরু করে। এই অবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা নাম দিয়েছেন ‘পপকর্ন ব্রেন’। অর্থাৎ মস্তিষ্ক সবসময় দ্রুত, উত্তেজক কনটেন্টে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, ফলে বাস্তব জীবনের ধীরগতির কাজগুলো আর ভাল লাগে না।

কেন রিলস এতটা ক্ষতি করছে

অতিরিক্ত ডোপামিন নিঃসরণঃ রিলস দেখলে মস্তিষ্কে বারবার ডোপামিন নামের ‘ভাল লাগার হরমোন’ নিঃসৃত হয়। এতে মুহূর্তের আনন্দ মিললেও, মস্তিষ্ক ক্রমশ আরও বেশি উত্তেজনা চাইতে থাকে। ফলে নেশার মতো বারবার রিলস দেখার অভ্যাস তৈরি হয়।

মনোযোগের সময় কমে যায়ঃ দ্রুত বদলে যাওয়া ভিডিও দেখার ফলে মস্তিষ্ক লম্বা সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ভুলে যায়। বই পড়া, পড়াশোনা, অফিসের কাজ বা একটানা কথা শোনা কঠিন হয়ে ওঠে।

স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত শর্ট ভিডিও দেখা মানুষজন প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় ভুলে যান। কী কাজ করতে এসেছিলেন, কোথায় জিনিস রেখেছেন-এসব মনে রাখতে সমস্যা হয়।

আত্মনিয়ন্ত্রণ শক্তি কমে যায়ঃ মস্তিষ্কের যে অংশ সিদ্ধান্ত নেওয়া ও আত্মনিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকে, সেখানে সংকেত দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে চোখের সামনে থেকে ফোন নামাতে চাইলেও তা পারেন না, সময়ের হিসেবও গুলিয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যা শুধু প্রবীণদের নয়, কিশোর ও তরুণদের ক্ষেত্রে ক্ষতি আরও বেশি। কারণ তাদের মস্তিষ্ক এখনও বিকাশের পর্যায়ে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, পুরোপুরি রিলস বন্ধ করা কঠিন হলেও ব্যবহারে ভারসাম্য আনা খুব জরুরি। দিনে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা, ফোন থেকে বিরতি নেওয়া, বই পড়া, ধ্যান বা একাগ্রতার অনুশীলন করলে মস্তিষ্ক আবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারে।