বছরের শেষের উৎসব মানেই দৈনন্দিন রুটিনে বড়সড় পরিবর্তন। দেরিতে ঘুমনো, ভারী খাবার, বেশি অ্যালকোহল গ্রহণ এবং অনিয়মিত খাওয়ার সময়। উৎসবের আনন্দে একটু বেশি খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিক হলেও, তা নীরবে হজমতন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে। তবে এই সময়ে অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে কঠোর নিয়ম বা আত্মসংযমের প্রয়োজন নেই। বরং উৎসবকালীন অভ্যাসে পেট কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, তা বোঝা এবং সচেতন ভাবে খাওয়াদাওয়া করাই মূল চাবিকাঠি।

নিয়ন্ত্রণ নয়, ভারসাম্যই মূল ভিত্তি

এভারব্লুম-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট সোনিয়া মেহতার মতে, ছুটির সময় হজমের সমস্যা সাধারণত নির্দিষ্ট খাবারের কারণে নয়, বরং জীবনযাত্রার ছন্দ বিঘ্নিত হওয়ার ফল। তিনি বলেন, “খাওয়ার সময় বদলে যাওয়া, খাবারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।”

দইয়ের মতো প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া সুস্থ থাকে। একই সঙ্গে ফাইবারসমৃদ্ধ ফল, সবজি ও গোটা শস্যজাত খাবার ভারী আহারের সময় হজমকে সহজ করে। এই সময়ে পর্যাপ্ত জলপান অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, “অ্যালকোহল খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে জল পান করা বা ডাবের জল মতো তরল বেছে নিলে পেট ফোলা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটাই কমে।”

কী খাওয়া হচ্ছে, তার পাশাপাশি কীভাবে খাওয়া হচ্ছে সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ধীরে খাওয়া, খুব দেরিতে খাওয়া বা অতিরিক্ত ভারী খাবার এড়ানো হজমের উপর চাপ কমায়। তিনি যোগ করেন, “এই ছোট অভ্যাসগুলো যদি উৎসবের আনন্দের সঙ্গে বজায় রাখা যায়, তবে শরীর আরও সহনশীল হয়ে ওঠে।”

নিউট্রিশনিস্ট ও স্পোর্টস নিউট্রিশনে বিশেষজ্ঞ শীতল যাদব জানান, উৎসবের সময় শুধু হজম নয়, শরীরের আরও অনেক কিছুই প্রভাবিত হয়।

উৎসব শুরুর আগেই মাইক্রোবায়োম প্রস্তুত করলে সুফল পাওয়া যায়। রান্না করে ঠান্ডা করা ভাত বা আলু, কাঁচা কলার মতো রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ এই ব্যাকটেরিয়ার জ্বালানি হিসাবে কাজ করে। রসুন, পেঁয়াজ, অ্যাসপ্যারাগাসে থাকা প্রিবায়োটিক আঁশ বাইফিডোব্যাকটেরিয়া অবং ল্যাক্টোব্যাসিলিকে পুষ্টি জোগায়।

“খালি পেটে কখনোই অ্যালকোহল পান করা উচিত নয়,” সতর্ক করেন পুষ্টিবিদ। খাবার অ্যালকোহলের শোষণ ধীর করে এবং অ্যাসিট্যালডিহাইডের মতো ক্ষতিকর উপজাত কমায়। অ্যালকোহলের সঙ্গে জল বা মিনারেল ওয়াটার পালা করে খেলে মোট অ্যালকোহলের পরিমাণ কমে। কম চিনি-যুক্ত পানীয় বেছে নিলে অন্ত্রের ক্ষতি আরও কম হয়।

সিম্পল কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে ফাইবার, প্রোটিন ও অসম্পৃক্ত ফ্যাট যেমন অলিভ অয়েল, বাদাম, বীজ ও মাছ খাদ্যতালিকায় যুক্ত করলে রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি কমে এবং প্রদাহও হ্রাস পায়। 
হালকা হাঁটা অন্ত্রের গতিশীলতা ও রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, আর ধীরে ও ভালভাবে চিবিয়ে খাওয়া হজম উন্নত করে এবং ক্ষতিকর জীবাণুর কাছে অপাচ্য খাবার পৌঁছনো কমায়।