আজকাল ওয়েবডেস্ক: থাইল্যান্ডের গহন অরণ্যে এক নতুন প্রজাতির গর্তবাসী মাকড়সার সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। তবে তার থেকেও বিস্ময়কর হল, এই প্রজাতির একটি মাকড়শার শরীরের অর্ধেক অংশ পুরুষ এবং বাকি অর্ধেক স্ত্রী। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই বিরল অবস্থাকে ‘বাইল্যাটেরাল গাইনান্ড্রোমর্ফিজম’ বলা হয়, যেখানে একটি প্রাণীর শরীরেই পুরুষ ও স্ত্রী, উভয়ের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার মাকড়সাদের জীববিদ্যা সম্পর্কে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রাণীবিদরা।
মায়ানমার সীমান্তের কাছে কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের জঙ্গল থেকে ‘ডামারকাস’ গণের এই মাকড়সাটি আবিষ্কার করা হয়েছে। রেশমি সুতোর আস্তরণ দেওয়া ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষরের মতো দেখতে গর্ত তৈরির জন্য এরা ‘উইশবোন স্পাইডার’ নামেও পরিচিত। সদ্য আবিষ্কৃত মাকড়শাটির বাম দিকটি স্ত্রী এবং ডান দিকটি পুরুষ, যা এই প্রজাতির ক্ষেত্রে এই প্রথম।
প্রসঙ্গত, রাস্তার ধারে স্থানীয় গবেষকরা প্রথম এই মাকড়সাগুলির সন্ধান পান। মাটি খুঁড়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত মাকড়শাগুলির মধ্যে একটির অদ্ভুত শারীরিক গঠন দেখে তাঁরা চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানকার গবেষকরাই নিশ্চিত করেন যে, নমুনাটি কেবল গাইনান্ড্রোমর্ফ নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি।
এই নতুন প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী, উভয় নমুনাই সংগ্রহ করা হয়েছে। এদের মধ্যে লিঙ্গভেদে আকার ও রঙের বিস্তর ফারাক রয়েছে। পুরুষ মাকড়সারা আকারে ছোট এবং ফ্যাকাশে ধূসর রঙের হয়, অন্যদিকে স্ত্রী মাকড়সারা আকারে বড় এবং তাদের শরীরে কমলা রঙের আভা দেখা যায়।
‘বাইলেটারাল গাইনান্ড্রোমর্ফিজম’ একটি অত্যন্ত বিরল জৈবিক ঘটনা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভ্রূণের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে যৌন ক্রোমোজোমের বিভাজনে কোনও ত্রুটির কারণে এমনটা হতে পারে। পরিবেশগত কারণ, পরজীবী বা ভাইরাসের প্রভাবও এর পিছনে থাকতে পারে।
নতুন প্রজাতির পুরুষ মাকড়সার শরীর প্রায় ০.৬ ইঞ্চি লম্বা হয়, অন্যদিকে স্ত্রী মাকড়সা প্রায় এক ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের শরীর গাঢ় অঙ্গার-ধূসর এবং কমলা রঙের মিশ্রণে তৈরি। আবিষ্কৃত দুই লিঙ্গের মাকড়শাটির শরীরের একদিক পুরুষের মতো ফ্যাকাশে ধূসর রং ও বৈশিষ্ট্য এবং অন্যদিকে স্ত্রীর মতো কমলা রং ও বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে, যা ছিল যৌন দ্বিরূপতার দিক থেকে এক প্রাকৃতিক আয়নার মতো। এক জাপানি মাঙ্গা চরিত্রের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘ডামারকাস ইনাজুমা’। ওই চরিত্রটিও নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারত।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
যদিও এই মাকড়সার বিষ নিয়ে এখনও কোনও গবেষণা হয়নি, তবে এর সমগোত্রীয় অন্য প্রজাতির মাকড়সার বিষগ্রন্থি রয়েছে। পর্যবেক্ষণকালে এদের বিষদাঁত বের করে তেড়ে আসতে দেখা গিয়েছে, যা থেকে অনুমান করা যায় যে এরা সম্ভবত বিষাক্ত।
এই আবিষ্কার অ্যারাকনিড বা মাকড়সা-জাতীয় প্রাণীদের বিকাশ এবং জিনতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার নতুন দিক খুলে দিল। একই সঙ্গে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অরণ্যে লুকিয়ে থাকা বিশাল জীববৈচিত্র্যের কথাও মনে করিয়ে দেয়। যদিও এই দুই লিঙ্গের মাকড়সাটি স্বাভাবিকভাবে প্রজননে সক্ষম না-ও হতে পারে, তবে এটি বিজ্ঞানীদের কাছে এক অমূল্য গবেষণার সুযোগ এনে দিয়েছে।
