আধুনিক জীবনের জাঁতাকলে অল্পবয়সেই শরীরে হানা দিচ্ছে ক্রনিক রোগ। একনাগাড়ে বসে কাজ, শরীরচর্চার অভাব, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়া সহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতি হচ্ছে  অঙ্গপ্রত্যঙ্গের। যার মধ্যে অন্যতম কিডনি। দিন দিন বাড়ছে ক্রনিক কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। বিশেষ করে কিডনিতে পাথর হওয়া আজকাল খুব সাধারণ সমস্যা। শরীরে খনিজ এবং লবণ জমা হলে এবং স্ফটিকের আকার ধারণ করলে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়। এই ছোট পাথরগুলি পরে ব্যথা, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া এবং আরও গুরুতর জটিলতা কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকদের মতে, পাথর ছোট হলে তা মূত্রের মাধ্যমেই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু পাথরের আকার বড় হলে এতদিন অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি ছিল না। যা বেশ ব্যথাদায়ক এবং সময়সাপেক্ষ। কিন্তু এবার এই সমস্যার সমাধান করবে রোবট। হ্যাঁ, ক্ষুদ্র চৌম্বক রোবটই কিডনির পাথর ভেঙে দেবে। সম্প্রতি এমনই অসাধ্য সাধন করেছেন বিজ্ঞানীরা। 


ডঃ ভেরোনিকা ম্যাগডাঞ্জের নেতৃত্বে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক যুগান্তকারী ক্ষুদ্র চৌম্বকীয় রোবট তৈরি করেছেন। যা ঝক্কি ছাড়াই সহজে কিডনির পাথর ভাঙতে পারবে। ঠিক কীভাবে কাজ করবে এই রোবট? রোবটটি এত ছোট যে শরীরের ভেতরের সরু নালীপথ দিয়ে সহজেই কিডনিতে পৌঁছতে পারে। বাইরে থেকে একটি বিশেষ চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে চিকিৎসকেরা রোবটকে চালান। কিডনিতে পৌঁছে এটি পাথরকে ছোট ছোট টুকরো করে দেয়। সেই টুকরোগুলো পরে প্রস্রাবের সঙ্গে বার হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ ধমনী থেকে নিংড়ে বার করবে খারাপ কোলেস্টেরল! শুধু মেনে চলুন সহজ টিপস, হার্ট থাকবে ভাল


যন্ত্রটি প্রায় ১ সেন্টিমিটার লম্বা একটি নরম, নমনীয় স্ট্রিপ যা হাইড্রোজেল এবং ইলাস্টোমার দিয়ে তৈরি এবং এতে একটি ছোট চুম্বক এবং 'এনজাইম ইউরেজ' থাকে। চিকিৎসকেরা ক্যাথেটার ব্যবহার করে মূত্রাশয়ে এটি প্রবেশ করাতে পারবেন, যেখানে এটি ঘূর্ণায়মান চুম্বক সহ একটি রোবোটিক হাতের মাধ্যমে কাজ করবে। একইসঙ্গে এটি একটি বহিরাগত চৌম্বকীয় প্যাচ ব্যবহার করে স্থিতিশীল করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে পাথরটিকে ছোট ছোট টুকরোতে দ্রবীভূত করবে যা কয়েক দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে চলে যাবে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গবেষণাগারে থ্রিডি-প্রিন্টেড মূত্রনালীর মডেল ব্যবহার করে রোবটটি মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে প্রস্রাবের পিএইচ ৬ থেকে ৭-এ বাড়িয়েছে এবং পাথরের ওজন প্রায় ৩০% কমিয়েছে।

পরবর্তী ধাপে বড় কোনও প্রাণীর উপর পরীক্ষা করে 'রিয়েল-টাইম আল্ট্রাসাউন্ড নেভিগেশন' সিস্টেমকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। যা পরবর্তীকালে চিকিৎসকদের যন্ত্রটিকে নিরাপদে এবং সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করবে।

কেন এটি বিশেষ

*  ব্যথাহীন চিকিৎসা – রোগীকে তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় না।

* অস্ত্রোপচারের ঝামেলা নেই – এই প্রক্রিয়ায় কাটাছেঁড়া বা সেলাই লাগে না।

* দ্রুত ফল – অস্ত্রোপচার কিংবা অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে পাথর দ্রুত ভেঙে যায়।

 * নিরাপদ: অত্যাধুনিক এই পদ্ধতিতে আশেপাশের টিস্যুতে কোনো ক্ষতি হয় না।

* সময় কম লাগে: এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। সাধারণত চিকিৎসকেরা আউটডোরে এটি ব্যবহার করতে পারেন।


গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে শুধু কিডনির পাথর নয়, শরীরের অন্য জায়গায় যেমন পিত্তথলির পাথর বা রক্তনালীর ব্লকেজ দূর করতেও এই ক্ষুদ্র রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও এখনও এটি পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। যা সফল হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।