আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রযুক্তির দুনিয়ায় বরাবরই এগিয়ে জাপান। এবার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আরও এক অভূতপূর্ব সাফল্যের নজির গড়ল জাপান। বিশ্বের দ্রুততম ইন্টারনেট পরিষেবার প্রায়োগ সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে এই দেশ। সম্প্রতি জাপানের জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট- এনআইসিটির বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেছেন, তাঁরা পরীক্ষামূলক ভাবে ১.০২ পেটা বাইট প্রতি সেকেন্ড গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম হয়েছেন।
সংখ্যাটি পড়ে অবাক লাগছে? লাগারই কথা। কারণ ১.০২ পেটা বাইট মানে প্রায় ১০ লক্ষ জিবি। আরও সহজ করে বললে, মাত্র এক সেকেন্ডে গোটা নেটফ্লিক্সের সমস্ত কনটেন্ট অন্তত ২৫ বার ডাউনলোড করে নেওয়া সম্ভব এই গতিতে!
এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে জাপানি গবেষকদের দীর্ঘ দিন ধরে চলা গবেষণা এবং উন্নত অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তি। বিশেষভাবে ডিজাইন করা মাল্টি-কোর অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে ৫৩.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন বরাবর এই ডেটা ট্রান্সমিশন সফল হয়েছে। সাধারণত ডেটা ট্রান্সফার করার জন্য যে সিঙ্গল-কোর ফাইবার ব্যবহার করা হত,এই ফাইবার কেবলটি তার তুলনায় ১০০ গুণ বেশি ডেটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে
এনআইসিটি-এর তরফে জানানো হয়েছে, একাধারে উন্নত মাল্টি-ওয়েভলেন্থ প্রযুক্তি, মোড ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং এবং অত্যাধুনিক সংকেত প্রক্রিয়াকরণ ব্যবহার করেই এই বিপুল গতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, এই গতির ইন্টারনেট টেস্ট ৬ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে, যার মানে হলো এত বিপুল ডেটা ৬০০০ কিলোমিটার দূরে পাঠিয়েও কোনও উল্লেখযোগ্য তথ্য ক্ষয় হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের গতি ভবিষ্যতের যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে চলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, মেটাভার্স কিংবা জেনারেটিভ এআই সমস্ত কিছুর পিছনে ইন্টারনেটের গতিবেগ একটি প্রধান চালিকা শক্তি। সেই দিক থেকে দেখলে এই পেটা-গতির ইন্টারনেট আমাদের আগামী দিনে পৃথিবীতে আরও সহজ তথ্য পরিবহন ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে দিতে পারে।
তবে এখানেই শেষ নয়। গবেষকদের মতে, আপাতত এই টেকনোলজি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও আগামী এক দশকের মধ্যে এটি বাস্তব দুনিয়ার ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে। এর ফলে শুধু কমার্শিয়াল সংস্থা বা গেমিং সংস্থা নয়, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মহাকাশ অভিযান, এমনকি জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্রেও এক বিশাল পরিবর্তন আসবে।

ভারতে যখন এখনও অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকায় ৫জি স্পিডই দূরের কথা, সেখানে জাপানের এই যুগান্তকারী সাফল্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রযুক্তি-সক্ষমতা কত দূর যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ব্রিটেন এবং জাপানের যৌথ গবেষক দল ১.০২ পেটা বাইটের কাছাকাছি গতি অর্জনের কথা বললেও, এবার সেই রেকর্ড ছাপিয়ে এই নতুন প্রযুক্তি নতুন স্বীকৃতি পেল আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি মহলে।
বিজ্ঞানের এই অভাবনীয় সাফল্য আমাদের ভবিষ্যৎ যোগাযোগ ব্যবস্থার দিগন্ত আরও প্রশস্ত করে দিল বলেই মত বিজ্ঞানীদের। এখন দেখার, আগামী দিনে কোনও দেশ বা সংস্থা এই গতি ছাপিয়ে আরও দ্রুতগামী ইন্টারনেট তৈরি করে ইতিহাস গড়তে পারে কি না।
