আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্পর্কে ঝগড়া বা মতভেদ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অনেক দম্পতি তর্কের পরে আবেগগত দূরত্ব কমাতে বা পুনরায় ঘনিষ্ঠতা ফিরে পেতে যে “মেকআপ সেক্স”-এর আশ্রয় নেন, তা দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। কিন্তু এবার বার্লিন-ভিত্তিক যৌন–পরামর্শদাতা এবং সম্পর্ক–বিশেষজ্ঞ জুলিয়া স্টেইন তুলে ধরলেন এক নতুন ধারণা—যার নাম তিনি দিয়েছেন “মাইন্ডফুল রিভেঞ্জ সেক্স”।
নামের সঙ্গে “রিভেঞ্জ” শব্দ থাকায় অনেকেই ভুলভাবে একে পরকীয়ার সমার্থক ভাবতে পারেন। কিন্তু স্টেইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মোটেই কারও সঙ্গে সম্পর্কের বাইরে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর বিষয় নয়। বরং তিনি বলেন, এটি এমন এক ধরনের যৌন মিলন যেখানে দম্পতিরা নিজেদের রাগ, হতাশা এবং তীব্র আবেগকে পরস্পরের প্রতি ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমেই রূপান্তরিত করেন।
স্টেইনের ভাষায়, “যখন দম্পতিরা রাগে বা আঘাতে উত্তেজিত থাকে, তখন তাদের মধ্যে যে তীব্র আবেগ তৈরি হয়, তা নষ্ট হওয়ার মতো নয়। সঠিক মানসিকতা ও যোগাযোগ থাকলে সেই আবেগই নতুন ধরনের সংযোগ তৈরি করতে পারে, যা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় কেন তারা একসঙ্গে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, অনেক সময় রাগ ও ইচ্ছা একই সময়ে শরীরে কাজ করে। “যখন আপনি ভালোবাসেন এমন কারও উপর রাগান্বিত হন, তখন শরীর স্বাভাবিকভাবেই উৎফুল্ল হয়ে ওঠে—হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, আবেগ তুঙ্গে থাকে। আশ্চর্যের বিষয়, এই শারীরিক প্রতিক্রিয়া উত্তেজনা বা যৌন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে খুব মিল।”
স্টেইনের মতে, এই আবেগকে ধ্বংসাত্মক পথে না নিয়ে গিয়ে যদি ইতিবাচক ঘনিষ্ঠতার দিকে ফিরিয়ে আনা যায়, তবে তা দম্পতির সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে পারে। তিনি বলেন, “যৌনমিলনের সময় শরীরে অক্সিটোসিন, এন্ডোরফিনসহ বেশ কিছু বন্ধন–সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, যা মানুষকে পরস্পরের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। ঝগড়ার পরে এই শারীরিক ঘনিষ্ঠতা এমন কিছু দেয়, যা শুধু কথায় পাওয়া যায় না।”
তবে স্টেইন জোর দিয়ে বলেন, এই পুরো প্রক্রিয়ার মূল শর্ত হলো পারস্পরিক সম্মতি। দু’জনেরই সমানভাবে আগ্রহ থাকা জরুরি, এবং কারও মধ্যে যদি প্রতিশোধ বা আধিপত্যের ভাব থাকে, তাহলে তা সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে।
তিনি পরামর্শ দেন, যৌন মিলনের আগে আবেগগুলি স্পষ্টভাবে স্বীকার করা উচিত। “যেমন কেউ বলতে পারে, ‘আমি রেগে আছি, কিন্তু তবুও তোমাকে চাই।’ এই ধরনের সততা পরিস্থিতিকে নিরাপদ করে এবং সঠিক টোন সেট করে,” বলেন স্টেইন।
এছাড়া, মিলনের পরে শান্ত হলে প্রকৃত সমস্যাটি নিয়ে কথা বলা উচিত বলে মনে করেন তিনি। “পরে বসে আলোচনা করুন—ঝগড়ার আসল কারণ কী ছিল, এবং ভবিষ্যতে কীভাবে সম্পর্ক আরও সুস্থ রাখা যায়। একসঙ্গে কাটানো ঘনিষ্ঠ মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে খোলামেলা কথাবার্তা বলা সহজ হয়।”
স্টেইন সতর্ক করে বলেন, কোনওভাবেই যেন যৌনতা তর্ক এড়ানোর উপায় বা শাস্তি দেওয়ার অস্ত্র হয়ে না ওঠে—যদি না উভয়েই স্পষ্টভাবে তাতে সম্মত থাকেন।
সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, দম্পতিরা পরস্পরের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করলে এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে, এই নতুন ধারণা তাদের সম্পর্ককে আরও পরিণত, ঘনিষ্ঠ এবং স্থায়ী করে তুলতে পারে।
