আজকাল ওয়েবডেস্ক: সদ্যোজাত শিশুর জন্মের পরেই তাকে ঘিরে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে একটা মিষ্টি বিতর্ক শুরু হয়ে যায়- শিশুর মুখটা কার মতো দেখতে হয়েছে, বাবার নাকি মায়ের? কারও চোখে সে অবিকল বাবার প্রতিচ্ছবি, আবার কারও মতে সে মায়ের আদল পেয়েছে। এই নিরীহ আলোচনা বহু পরিবারেরই এক আনন্দঘন মুহূর্ত। কিন্তু এই বিতর্কের পিছনেও যে লুকিয়ে থাকতে পারে শিশুর স্বাস্থ্যের মতো এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? সাম্প্রতিক এক গবেষণা তেমনটাই দাবি করছে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এক চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তাঁদের মতে, যে সমস্ত শিশু জন্মের সময় তাদের বাবার মতো দেখতে হয়, তারা এক বছর বয়সে তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাস্থ্যবান থাকে। বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সলোমন পোলাচেক এবং সাদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির মার্লন ট্রেসির নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। তাঁদের গবেষণার ফল বলছে, যে শিশুরা মায়ের চেয়ে বাবার চেহারার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্য বহন করে, প্রথম জন্মদিনে তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল থাকে।
এর পিছনে কারণ কী?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, এর পিছনে কোনও অলৌকিক বা জিনগত কারণ নেই, বরং রয়েছে এক গভীর সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা। গবেষণাপত্র অনুযায়ী, যখন একজন বাবা দেখেন যে তাঁর সন্তান অবিকল তাঁর মতো দেখতে, তখন পিতৃত্ব নিয়ে তাঁর মনে এক ধরনের বাড়তি আত্মবিশ্বাস এবং নিশ্চয়তা জন্মায়। এই দৃশ্যমান সাদৃশ্য বাবাকে সন্তানের প্রতি আরও বেশি যত্নশীল এবং দায়িত্ববান হতে উৎসাহিত করে।
গবেষকদের মতে, বাবারা যখন সন্তানের মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান, তখন তাঁরা অবচেতনভাবেই সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন। তাঁরা সন্তানের দেখভাল, যত্ন এবং মানসিক বিকাশে আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এই ‘ফাদারলি ইনভলভমেন্ট’ বা বাবার সক্রিয় অংশগ্রহণই শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির মূল চাবিকাঠি। যে সমস্ত পরিবারে বাবা-মা একসঙ্গে থাকেন না, সেই ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আরও বেশি প্রকট হয়। সন্তানের সঙ্গে চেহারার মিল থাকলে বাবারা প্রায়শই সন্তানের জন্য বেশি সময় এবং সম্পদ বিনিয়োগ করেন, যা সরাসরি শিশুর স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাবারা বেশি যত্নশীল হলে শিশুরা সঠিক পুষ্টি পায়, সময়মতো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং সার্বিকভাবে তাদের দেখভালের মান উন্নত হয়। ফলস্বরূপ, এক বছর বয়সের মধ্যে তাদের অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
সুতরাং, বিষয়টি কেবল চেহারার মিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই গবেষণা আসলে শিশুর জীবনে, বিশেষ করে প্রথম বছরে, বাবার সক্রিয় ভূমিকার গুরুত্বকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সন্তানের মুখের আদল কার মতো, সেই বিতর্ক না হয় চলতেই থাকবে, কিন্তু তার সুস্থ ভবিষ্যতের আসল রহস্য যে বাবার স্নেহ এবং সময়ের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে, এই গবেষণাই তার অন্যতম প্রমাণ।
