গুটি গুটি এগিয়ে আসছে শীত। ভোরের দিকে গায়ে উঠছে চাদর। সন্ধে গড়ালে ফ্যান বন্ধ করলেই যেন আরাম। ছোটবেলায় এই সময়টাতেই আলমারি-ট্রাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসত উলের সোয়েটার, লেপ-কম্বলের দল। মা-ঠাকুমারা এরপরে বেশ ক’টাদিন জমিয়ে রোদ খাওয়াতেন তাদের। তবে সে সব গায়ে উঠত। গোটা শীতকাল ব্যবহারের পরে ফের যত্ন করে কেচে, রোদে শুকিয়ে, ন্যাপথলিন বা কালো জিরে-শুকনো লঙ্কা সহযোগে গরম জামারা ফের সেঁধিয়ে যেত ট্রাঙ্ক-আলমারির শীতঘুমে।
এখনকার ছুটন্ত জীবনে সময়টাই যেন সবচেয়ে দুর্লভ বস্তু। তাই আগের মতো রোদে-ছায়ায় শীতপোশাকদের যত্ন করা হয়ে ওঠে না অনেকেরই। তবে তাদের কিছুটা পরিচর্যা তো লাগেই। তা না হলে গরম জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যাবে অল্প দিনেই। এখন শুধু উল নয়, ফার, ভেলভেট, সিল্ক, কর্ড, ক্যাশমিয়ার— হরেক রকম ফ্যাব্রিকের শীতপোশাকেই অভ্যস্ত বাঙালি। শীত পড়ার আগেই তাই জেনে নিন শীতের পোশাক ভাল রাখার হালহদিশ।
কাচাকুচিঃ অনেকেই শীত পড়ার আগে এবং শীত শেষে— দু’দফায় কাচেন শীতপোশাক। উলের ভারী শীতপোশাক, ফার বা সিল্কের পোশাক, জ্যাকেট বা কোট ড্রাই ক্লিন করাই ভাল। তাই লন্ড্রিতে পাঠাতে পারেন। হাল্কা উলের পোশাক কিংবা ক্রাম্পলড ভেলভেট জাতীয় পোশাক চাইলে বাড়িতে কাচতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জলের সঙ্গে ভিনিগার বা নরম সাবান মিশিয়ে ধুয়ে সকালের রোদে মেলে দিন। ক্যাশমিলানের পোশাক ড্রাই ক্লিন না করাই দস্তুর। তার বদলে ঠান্ডা জলে বেবি শ্যাম্পু বা শীতপোশাকের উপযোগী ডিটারজেন্ট দিয়ে তাতে ভিজিয়ে রাখুন। তার পরে হাল্কা হাতে ধুয়ে শুকোতে দিন। শীতের পোশাক কাচলে কোনও ভাবেই নিঙরোবেন না। এতে তা নষ্ট হয়ে যায়। তার বদলে পোশাক হাল্কা হাতে ঘুরিয়ে বা চেপে জল ঝরিয়ে নিন। ওয়াশিং মেশিনে কাচার ক্ষেত্রে অবশ্যই মানানসই লিক্যুইড সাবান দিয়ে জেন্টল ওয়াশিং পদ্ধতি বেছে নিন।
শুকিয়ে নেওয়াঃ শীতের পোশাক সাধারণ ভাবে ভারী এবং তা জল টানেও বেশি। ফলে কাচার সময়ে গরম জামাকাপড় অনেকটা জল শোষণ করে। সেই অবস্থায় শুকোনোর জন্য কোথাও থেকে ঝুলিয়ে দিলে অতিরিক্ত ভারের কারণে সোয়েটার, কুর্তি বা জ্যাকেটের শেপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তার বদলে আলো-হাওয়া-রোদ আসছে, এমন একটা সমতল জায়গায় টেবিল কিংবা পরিষ্কার মেঝেতে টানটান করে মেলে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে উল্টে দিন। এতে শুকিয়েও যাবে, আকার বদলে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। তবে খেয়াল রাখবেন পুরো পোশাকটা যেন ঠিকমতো শুকোয়, তা নাহলে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধবে তাতে।
ভাঁজ করাঃ শীতপোশাক ঠিকমতো ভাঁজ না করলে সমস্যা আপনারই। ধরা যাক, কাচার পরে শুকিয়ে যাওয়া সোয়েটার যেমন তেমন করে ভাঁজ করে রাখলেন। তারপরে পরতে গিয়ে দেখলেন ঠিক সামনে পেটের কাছটায় বড়সড় ভাঁজের দাগ। ব্যস! আপনার সাজটাই মাটি! তার চেয়ে হাতে একটু সময় নিয়ে ঠিক মতো ভাঁজ করুন সোয়েটার। জ্যাকেটের ক্ষেত্রে অবশ্য ভাঁজ করার বদলে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলেই ভাল।
ইস্ত্রি করাঃ সাধারণ ভাবে শীতের পোশাক, বিশেষত সোয়েটার বা জ্যাকেট ইস্ত্রি না করাই ভাল। উলের সোয়েটার ইস্ত্রি করার ক্ষেত্রে তা স্টিম ড্রাই করুন। একান্তই ইস্ত্রি করতে হলে সোয়েটারটা উল্টো করে নিন। ভিতরের দিকটায় ইস্ত্রি চালান। তার আগে অবশ্যই খেয়াল করে ইস্ত্রির সেটিং উলের উপযোগী করে নিতে ভুলবেন না।
দাগ ধরলেঃ শীতের জামাকাপড়ে কোনও দাগ লাগলে অল্পেতেই বসে যেতে চায়। তখন তাকে সাফ করা সে এক ঝক্কি! বরং সম্ভব হলে কাদা, খাবার বা তেল-কালির দাগ লাগার পরেই চটজলদি নরম কোনও সাবান জায়গাটায় একটু লাগিয়ে রাখুন। তারপরে ধুয়ে ফেলুন অল্প জল দিয়ে। দাগ আর বসবে না।
খেয়াল রাখুন
বিভিন্ন ধরনের ফ্যাব্রিকের গরম জামাকাপড় কাচা, শুকোনো বা ইস্ত্রির নিয়ম কিন্তু আলাদা। সাধারণ ভাবে পোশাকের ট্যাগে সেই তথ্য দেওয়া থাকে। না থাকলে যেখান থেকে কিনছেন, সেখান থেকেও জেনে নিতে পারেন। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যত্নে রাখুন সাধের শীতপোশাকদের। দেখুন তারাও কেমন উজ্জ্বল থাকে অনেকদিন!
