নিরামিষাশীদের মধ্যে পনির অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। যারা মাঝে মাঝে নিরামিষ খান, তাঁদেরও পনির বেশ পছন্দের। পনিরের রয়েছে হরেক পুষ্টিগুণ। পনির দিয়ে মশলাদার খাবার যেমন তৈরি করা যায়, তেমনই বেশ স্বাস্থ্যকর পদও চট করে বানিয়ে ফেলা যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলেও নির্বিদ্ধায় খেতে পারেন পনির। কিন্তু প্রশ্ন হল ভেজালের যুগে বাজার থেকে যে পনির কিনে আনছেন তা নকল না তো? কারণ ইদানীং রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল পনির।
সম্প্রতি এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইদানীং পনিরে দুধের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে উদ্ভিজ্জ তেল, স্টার্চ এবং কেমিক্যাল মিশ্রণ। অভিযান চালায়ি জয়পুর ও চণ্ডীগড়ে একাধিক সন্দেহভাজন পনির ও দুধজাত মিষ্টি নষ্ট করা হয়েছে। খাদ্য সুরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, উৎসবের মরশুমে ভেজাল পণ্য তৈরির প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে দুধ, মিষ্টি ও পনিরের মতো পচনশীল পণ্যে এই প্রতারণা বেশি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নকল পনিরে আসল দুধের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় ভেজিটেবল অয়েল যেমন পাম তেল বা হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট, স্টার্চ বা কর্ন ফ্লাওয়ার, কেমিক্যাল স্ট্যাবিলাইজার ও রঙিন সংরক্ষণকারী পদার্থ। এইসব মিশ্রণ দিয়ে তৈরি পনির দেখতে ও গন্ধে আসলের মতো হলেও এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের অভাব থাকে। বরং এতে থাকা কৃত্রিম উপাদান শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, নকল পনির খেলে শরীরে নানা বিপদ হতে পারে। যেমন-
তাৎক্ষণিক প্রভাব: বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, অ্যালার্জি, ত্বকের সমস্যা।
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: কিডনি ও লিভারের ক্ষতি, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
পুষ্টিহীনতা: আসল পনিরে থাকা প্রোটিন ও খনিজ না থাকায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
হৃদরোগের ঝুঁকি: ভেজিটেবল অয়েল ও ট্রান্স ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ায়।
নকল পনির চিনবেন কীভাবে
ঘরোয়া কয়েকটি সহজ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে পনির আসল না নকল বোঝা সম্ভব-
১. গন্ধ ও রলু পরীক্ষা করুন: আসল পনিরে হালকা দুধের গন্ধ থাকবে। রাসায়নিক বা সাবানের মতো গন্ধ মানেই সন্দেহজনক।
২. ছোঁয়ায় পার্থক্য: আসল পনির নরম হলেও সহজে ভেঙে যায়; নকল পনির রাবারের মতো টানটান।
৩. উষ্ণতা পরীক্ষা: পনির গরম করলে যদি তেল আলাদা হয়ে যায় বা গলে যায়, বুঝবেন তাতে ভেজিটেবল অয়েল রয়েছে।
৪. আয়োডিন পরীক্ষা: পনিরের টুকরোয় আয়োডিন ফোঁটা দিলে যদি নীলচে-কালো হয়, তাহলে বুঝবেন স্টার্চ মিশ্রিত।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এসব ঘরোয়া পরীক্ষা সবসময় নির্ভুল নয়। সন্দেহ হলে স্থানীয় স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ জানান।

পনির কেনার আগে মেনে চলুন
*কেবলমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও বিশ্বস্ত দোকান থেকে পনির কিনুন।
*অতিরিক্ত সস্তা দামে বিক্রি হলে সতর্ক হন। সস্তার ফাঁদে পড়লে ক্ষতি হতে পারে।
*পনির ফ্রিজে রাখুন এবং এক-দু’দিনের মধ্যে ব্যবহার করুন।
*দোকানে গিয়ে পনিরের গন্ধ ও টেক্সচার পরীক্ষা করুন; রাসায়নিক বা অদ্ভুত গন্ধ থাকলে কিনবেন না।
*প্যাকেটজাত পনির কিনলে খাদ্য সুরক্ষা সংস্থার অনুমোদনের লোগো ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ দেখে নিন।
