শীতের সময় কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমনোর মতো আরাম আর কোথাও নেই! এই সময়ে অনেকেই ঠান্ডা এড়াতে লেপ-কম্বল দিয়ে মুখ–নাক সম্পূর্ণ ঢেকে ঘুমনোর অভ্যাস গড়ে তোলেন। প্রথমে বিষয়টি আরামদায়ক মনে হলেও, চিকিৎসকদের মতে এটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা থেকে শুরু করে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

চিকিৎসক নরেশ কুমার জানিয়েছেন, কম্বল বা লেপে মুখ ঢেকে সারারাত ঘুমোলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যায়। এর ফলে অ্যালঝাইমার ও ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিভ্রংশজনিত সমস্যা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো রাত কম্বলের তলায় মুখ রেখে ঘুমালে শরীরে অক্সিজেন লেভেল কমে যায় এবং বাড়ে শরীরের তাপমাত্রা। এতে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বিভ্রান্তি-সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ঘুমোলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

যাদের স্লিপ অ্যাপনিয়া রয়েছে, তাদের ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। অনেক সময় আচমকা শ্বাস বন্ধ হয়ে মানুষ জেগে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা জানান, মুখ ঢেকে ঘুমোলে এই সমস্যা আরও প্রকট হয় এবং কখনও কখনও শ্বাস বন্ধ থাকার সময় এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

কম্বলের ভিতর মুখ ঢেকে ঘুমোলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। বিশেষ করে হাঁপানি বা হৃদরোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের ঘাটতি মারাত্মক হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ে।
কী করবেন?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মুখ ঢেকে ঘুমনো একেবারেই অনুচিত। যদি খুব ঠান্ডা লাগে, মাথা পর্যন্ত কম্বল নিলেও নাক এবং মুখ বাইরে রাখাই সবচেয়ে নিরাপদ। এতে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছবে এবং শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য ঝুঁকি কমবে।

শীতের সময় গরম থাকার জন্য লেপ বা কম্বলের ভিতরে মুখ পুরোটা ঢেকে রাখা অনেকেই অভ্যাসে পরিণত করেছেন। তবে আরামদায়ক মনে হলেও এই অভ্যাস নিঃশ্বাস নেওয়ার পথে বাধা তৈরি করে, শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছতে বাধা দেয়। আর অক্সিজেনের ঘাটতি রাতভর চলতে থাকলে মাথাব্যথা, মনোযোগ কমে যাওয়া, ক্লান্তি এমনকি দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হয়।

তাই কম্বলের ভিতরে মাথা পর্যন্ত ঢুকে ঘুমনোর চেয়ে মুখ এবং নাক খোলা রেখে গরম থাকার উপায় খুঁজে নেওয়া বেশি নিরাপদ। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকলে ঘুমও শান্ত হয়, আর সকালে ঘুম ভাঙার পর শরীর থাকে সতেজ। অর্থাৎ সামান্য অভ্যাস বদলেই নিজের ঘুমের মান এবং স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া সম্ভব।