শরীরে হরমোনের পরিবর্তন শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা হঠাৎ মেজাজ বদলের পেছনে অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কাজ করে। আসলে শরীরের মতো মনও নানাভাবে জানান দেয়, সে ভাল নেই। কিন্তু শরীর নিয়ে কম-বেশি সচেতন হলেও মনের হাল নিয়ে অনেকেই খুব একটা ভাবেন না।
শরীরের অনেক নিয়ন্ত্রকের মধ্যে অন্যতম হল হরমোন, তেমনই কিছু নির্দিষ্ট হরমোনের প্রভাব সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়ে। হরমোন শরীরের বার্তাবাহক। হরমোন হল শরীরের রাসায়নিক বার্তাবাহক। যখন শরীরের বিভিন্ম হরমোনের মাত্রা কমে যায় বা অস্বাভাবিক হয়, তখন উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা এবং ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হতে দেখা যায়। তাহলে হরমোনের কারণে কীভাবে মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে জেনে নিন-
আরও পড়ুনঃ ঘন ঘন মুড সুইং, ভোগাচ্ছে মুখের ভিতরে ঘি! নেপথ্যে এই ভিটামিনের ঘাটতি? এই সব লক্ষণ না বুঝলেই সর্বনাশ
* স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের প্রভাব: কর্টিসলের মাত্রা কমে গেলে রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে সেরোটোনিন কমে যায় , যা সুখের অনুভূতির জন্য জরুরি। ইস্ট্রোজেনও সেরোটোনিনকে প্রভাবিত করে, ফলে মানসিক স্থিরতা কমে যায়।
* থাইরয়েড ও অন্যান্য রোগের প্রভাব: থাইরয়েড হরমোন শক্তি ও বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। এর অস্বাভাবিকতা উদ্বেগ, অস্থিরতা ও মেজাজ খারাপের পিছনে থাকতে পারে। পিসিওএস কিংবা পিসিওডি, মেনোপজ, দীর্ঘমেয়াদি মানসিল চাপ বা অন্যান্য হরমোনজনিত রোগও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।

* ঘুমের ব্যাঘাত: সুস্থতার জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি। আর এই ঘুমের উপরও প্রভাবে ফেলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। মেলাটোনিন সহ ঘুম নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বেড়ে যায় বিষণ্নতা ও রাগ।
* প্রসব পরবর্তী হরমোন পরিবর্তন: সন্তান প্রসবের পর মায়ের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের মাত্রা হঠাৎ কমে যায়। এই পরিবর্তন অনেক নতুন মায়ের প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতার কারণ হয়।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
যদি দীর্ঘদিন ধরে মেজাজ পরিবর্তন, ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি, স্মৃতিভ্রংশ, ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার মতো অস্বাভাবিক উপসর্গ লক্ষ্য করেন তাহলে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ক জরুরি। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে হরমোনজনিত সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। হরমোন যেহেতু সরাসরি আপনার মেজাজ, ঘুম, শক্তি ও আচরণে প্রভাব ফেলে। তাই শারীরিক হোক না মানসিক কোনও পরিবর্তন অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
