আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঠাকুমা-দিদিমাদের ঘরোয়া টোটকার তালিকায় উষ্ণ দুধের স্থান বরাবরই বেশ উপরে। আর তার সঙ্গে যদি মেশানো যায় সামান্য দারুচিনির গুঁড়ো, তবে তো সোনায় সোহাগা। কেবল স্বাদ বা গন্ধের জন্যই নয়, এই পানীয়টির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যকর উপাদান। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানও সিলমোহর দিয়েছে এই প্রাকৃতিক মিশ্রণের নানা গুণের উপর। অনিদ্রা থেকে শুরু করে হজমের সমস্যা, বহু ক্ষেত্রেই এক গ্লাস দারুচিনি মেশানো দুধ হতে পারে আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ এবং দারুচিনি, দু’টি উপাদানেরই নিজস্ব পুষ্টিগুণ রয়েছে। দুধ যেখানে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি-এর মতো অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে ভরপুর, সেখানে দারুচিনি পরিচিত তার অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য। এই দুই উপাদান যখন একসঙ্গে মেশে, তখন তাদের সম্মিলিত প্রভাব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
দারুচিনি দুধের নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
১। অনিদ্রার সমস্যা দূর করে: সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতে যাঁদের সহজে ঘুম আসতে চায় না, তাঁদের জন্য এই পানীয়টি মহৌষধের মতো কাজ করতে পারে। উষ্ণ দুধ মস্তিষ্কে ট্রিপ্টোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা সেরোটোনিন ও মেলাটোনিনে রূপান্তরিত হয়ে স্নায়ুকে শান্ত করে এবং গভীর ঘুমে সাহায্য করে। দারুচিনির মিষ্টি গন্ধ এবং পেশি শিথিল করার ক্ষমতা এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে।
২। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে: একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দারুচিনি শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগী বা যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা খানিক বেশির দিকে, তাঁরা নিয়মিত এই পানীয় খেলে উপকার পেতে পারেন।
৩। হজমশক্তি উন্নত করে: দারুচিনিতে থাকা নানা যৌগ হজমজনিত সমস্যা, যেমন- গ্যাস, অম্বল বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে এবং মেটাবলিজম বা বিপাকহার বাড়াতেও সহায়ক।
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: দারুচিনি পলিফেনল নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে পরিপূর্ণ। এটি শরীরের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল গুণাবলী শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ ও মরশুমি অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায়।
৫। হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করে, এ কথা সকলেরই জানা। দারুচিনির প্রদাহ-রোধী (অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি) গুণ বাতের ব্যথা বা গাঁটের যন্ত্রণা কমাতেও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
কীভাবে বানাবেন?
এক কাপ বা এক গ্লাস দুধ নিন। এরপর তাতে এক টুকরো দারুচিনি বা অর্ধেক চা চামচ দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। নামানোর পর সামান্য ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। প্রয়োজনে স্বাদের জন্য এক চামচ মধু মেশাতে পারেন।
তবে মনে রাখবেন, কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়। দিনে এক গ্লাসের বেশি পান না করাই শ্রেয়। যাঁদের কোনও নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই এই পানীয়টি নিজেদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
