আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভাঙছে নবদম্পতীদের ঘনিষ্ঠতা। ভাঙছে পুরুষের আত্মবিশ্বাস

বিবাহের পর দাম্পত্য জীবনের স্বাভাবিক অঙ্গ হিসেবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে সাধারণত এক ধরনের সুখকর ও আবেগময় অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু শহুরে জীবনের ক্রমবর্ধমান চাপ, উদ্বেগ এবং সামাজিক প্রত্যাশার বোঝা এই সম্পর্কের জগতে অস্বস্তি তৈরি করছে। নবদম্পতীরা ফুলশয্যায় অনেক সময় সঙ্গীর মুখ থেকে শুনছেন—“আজ রাত নয়, সোনা”—যা ধীরে ধীরে সাধারণ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে। এতে দাম্পত্য সম্পর্কে অপ্রকাশিত এক অস্বস্তি জমতে থাকে এবং উভয়েই বিভ্রান্ত বোধ করেন।

 

মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, সমস্যার মূল কারণ শারীরিক নয়, মানসিক। আজকের প্রজন্ম চাকরির অনিশ্চয়তা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আর্থিক দায়-দায়িত্ব কিংবা সামাজিক তুলনা নিয়ে অতিরিক্ত চাপে থাকে। বিশেষত নিজের শরীর নিয়ে হীনমন্যতা বা ‘কেমন দেখাচ্ছে’ এই ভাবনা থেকে যে আত্মবিশ্বাসহীনতা তৈরি হয়, তা ঘনিষ্ঠতার স্বাভাবিক আবহ ভেঙে দেয়। অন্যদিকে অনেক পুরুষ মনে করেন, তাঁদের থেকে সবসময় অতিরিক্ত প্রত্যাশা করা হয়, যা পূরণ করতে না পারলে তারা ব্যর্থ বোধ করেন। ভেঙে পড়ে তাদের আত্মবিশ্বাস। ফলে দাম্পত্যের আনন্দের পরিবর্তে একটি মানসিক ভারগ্রস্ততা নেমে আসে।

 

নারী হেল্পলাইন এবং কাউন্সেলিং সেন্টারে আসা অভিযোগের ঢল এই প্রবণতার প্রমাণ বহন করছে। স্বামী কিংবা স্ত্রী উভয়েই জানিয়েছেন, সঙ্গী তাঁদের এড়িয়ে চলছেন, ফলে সম্পর্কে অকারণ দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেন সঙ্গীর ভালোবাসা কমে গেছে, আবার কেউ আতঙ্কিত হন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি আসলে উদ্বেগ এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবজনিত, যার সমাধান রয়েছে খোলামেলা কথোপকথন এবং প্রয়োজন হলে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার মাধ্যমে।

 

সামাজিকভাবে বিষয়টি আরও জটিল। যদিও আধুনিক সময়ে স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত পছন্দ এবং সম্পর্কের খোলামেলা দিক নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে, তবুও ঘনিষ্ঠতা নিয়ে এখনও প্রচুর ট্যাবু রয়ে গেছে। বিশেষ করে নারীরা ছোটবেলা থেকেই যে লজ্জা, নিয়ন্ত্রণ ও শালীনতার ধারণা নিয়ে বড় হন, তা বিবাহ-পরবর্তী জীবনে টেনে আনেন। অন্যদিকে পুরুষরাও ‘ক্ষমতা প্রমাণের চাপ’ এবং সামাজিক ধারণার ভারে মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সমস্যার সমাধান দাম্পত্য জীবনের প্রতি চাপ কমিয়ে এনে সম্পর্কের আবেগীয় দিককে শক্তিশালী করার মধ্যে নিহিত। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা, পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানো, এবং সম্পর্ককে শুধুমাত্র শারীরিকতায় সীমাবদ্ধ না রেখে মানসিক কাছাকাছিও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হলে কাউন্সেলিং বা থেরাপি নেওয়া একেবারেই লজ্জার কিছু নয়। বিবাহিত জীবনের ভিত্তি হল বিশ্বাস ও বোঝাপড়া। তাই উদ্বেগে ভুগলেও দাম্পত্য সম্পর্ককে সহজভাবে গ্রহণ করাই সম্পর্ককে সুস্থ রাখার একমাত্র উপায়।