আজকাল ওয়েবডেস্কঃ কথায় রয়েছে, কিছু মানুষের বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না। অত্যন্ত চাপা স্বভাবের হওয়ায় তাঁরা মনের কথা গুছিয়ে বলতে পারেন না। আবার অনেকে নিজের কথা বললেও সঠিকভাবে অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু যদি এমন হতো যে কথা না বলেও একে উপরের মনের ভাবনা বুঝতে পারতেন! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এবার কোনও শব্দ প্রয়োগ না করেও নিজের মনকে সরাসরি এক বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবেন। সম্প্রতি এমনই অভিনব সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।  


প্রথমবার বিজ্ঞানীরা তিনজনের মনকে একসঙ্গে যুক্ত করতে সফল হয়েছেন। যার মাধ্যমে তিন জন মানুষ একে অপরের সঙ্গে সরাসরি ভাবনা প্রকাশ করতে পারবেন। অর্থাৎ কেবল চিন্তাভাবনা করেই আপনি কাউকে বার্তা পাঠাতে বা গ্রহণ করতে পারবেন। যা একসময় বিজ্ঞানে কল্পনা বলে মনে হত, তা এখন বাস্তবায়িত হতে চলেছে।


বিজ্ঞানীরা ‘ব্রেইননেট’ নামে একটি সিস্টেম তৈরি করেছেন যা তিনজন মানুষের মস্তিষ্ককে একসঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। এই ব্যবস্থায়  দু’জন ব্যক্তি মস্তিষ্কের সংকেত ছাড়া আর কোনও কিছু ব্যবহার না করেই তৃতীয় ব্যক্তির কাছে তথ্য পাঠাতে পারেন। এই সিস্টেমটি মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পড়ার জন্য ইইজি (EEG) ইলেকট্রোড এবং যার কাছে তথ্য যাচ্ছে তাঁর মস্তিষ্কে চিন্তাভাবনা প্রবেশ করানোর জন্য টিএমএস (TMS) অর্থাৎ ট্রান্সক্র্যানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন ব্যবহার করে।


এখানেই শেষ নয়। যুগান্তকারী পরীক্ষায়, গবেষকরা কোনও ফোন, ইন্টারনেট নয়, শুধুই চিন্তার শক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে ফ্রান্সে "হ্যালো" এর মতো শব্দ সম্বলিত একটি বার্তা একজনের মন থেকে আরেকজনের মনে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থাৎ এটি পরিষ্কার যে ইন্টারনেটের সঙ্গে যেমন বিভিন্ন যন্ত্রের যোগ থাকে, তেমনই মানুষের মস্তিষ্ক শীঘ্রই অন্যান্য মস্তিষ্কের নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। এক ধরণের "ইন্টারনেট অফ মাইন্ডস" আসতে চলেছে যেখানে চিন্তাভাবনা, তথ্য এমনকী আবেগও সরাসরি একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যাবে। 


এই প্রযুক্তি স্নায়ুবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানব যোগাযোগের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে প্রস্তুত। শীঘ্রই এমন এক ভবিষ্যৎ আসতে চলেছে যেখানে সহজ মানসিক সংযোগের মাধ্যমে জটিল ধারণা, বেদনা, আনন্দ, এমনকী জ্ঞানও তাৎক্ষণিকভাবে ভাগ করা যাবে। যদিও আপাতত সবটাই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি কার্যকরী হলে এক নতুন যুগের সূচনা হবে- এমন একটি যুগ যেখানে নীরবতা সবচেয়ে অর্থপূর্ণ ভাষা হয়ে উঠবে।