ভারতে ক্যানসার আর কোনও বিরল রোগ নয়। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় প্রতি এগারো ভারতীয়ের মধ্যে একজনের জীবদ্দশায় ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই বৃদ্ধি পাওয়া সংখ্যার কারণে ক্যানসারের প্রাথমিক সতর্কতার লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসার সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে তার নিরাময় সম্ভব।
সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসারের ‘রেড ফ্ল্যাগ’গুলি চিনে নেওয়া আগে থেকে চিকিৎসায় সাহায্য করে, যা ফলাফলকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে সাহায্য করে। চিকিৎসক অঙ্কুর ব্যাহল ভারতের সবচেয়ে বেশি দেখা ক্যানসারের কিছু মূল উপসর্গ তুলে ধরেছেন।
ভারতে সাধারণ ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ ও সতর্কতা
ভারতে স্তন ক্যানসার মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসারের মধ্যে একটি। সফল চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো হল:
স্তন বা বাহুর নিচে ফোলা বা মাংসপিণ্ড যা সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে যায় না।
স্তনের আকার, আকৃতি বা রূপে পরিবর্তন।
স্তন থেকে রক্তমিশ্রিত স্রাব।
স্তনের ত্বকে দাগ, লালচে ভাব বা কমলার খোসার মতো টেক্সচার।
মহিলাদের নিয়মিত নিজের স্তন নিজের পরীক্ষা করা উচিত এবং কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ম্যামোগ্রাফি এবং ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা প্রাথমিক শনাক্তকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাশয় (সার্ভিকাল) ক্যান্সার
ভারতে গর্ভাশয় ক্যানসার এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রাথমিক লক্ষণগুলো হল:
অনিয়মিত রক্তস্রাব, যেমন মাসিকের মধ্যে রক্তপাত, যৌন সম্পর্কের পর, বা মেনোপজের পর।
অস্বাভাবিক যোনি স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত বা রক্তমিশ্রিত।
পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা বা যৌনক্রিয়ার সময় ব্যথা।
নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা এবং এইচপিভি ভ্যাকসিন কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
ফুসফুসের ক্যানসার
ধূমপান এবং বায়ু দূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত ফুসফুসের ক্যানসার ভারতে বাড়ছে। লক্ষণগুলো হল:
তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী কাশি।
রক্তমিশ্রিত কফ, কাশি।
শ্বাসকষ্ট বা গভীর নিঃশ্বাসের সময় বুকের ব্যথা।
অপ্রত্যাশিত ওজন কমা বা ক্ষুধার অভাব।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য লো-ডোজ সিটি স্ক্যান প্রাথমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মুখের ক্যানসার
ভারতে ধূমপান এবং তামাক চেবানোর কারণে মুখের ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। প্রধান লক্ষণগুলো হল:
দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে না সেরে ওঠআ আলসার বা ক্ষত।
মুখের ভিতরে সাদা বা লাল দাগ।
গিলে খেতে কষ্ট বা দীর্ঘস্থায়ী কণ্ঠস্বরে খসখসানি।
প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণ হলে রোগীর চিকিৎসায় সাফল্যে সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। নিয়মিত দাঁত পরীক্ষা এবং তামাক এড়ানো ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কোলোরেক্টাল ক্যানসার
কোলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ প্রায়ই সাধারণ সমস্যার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হয়, তাই প্রায়ই দেরিতে ধরা পড়ে। সতর্কতার লক্ষণগুলি হল:
দীর্ঘস্থায়ী মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়েরিয়া।
মলে রক্ত দেখতে পাওয়া বা কালচে ভাব।
পেটের ব্যথা।
অপ্রত্যাশিত ভাবে ওজন কমা।
কোলোনোস্কপি এবং স্টুল পরীক্ষা প্রাথমিক শনাক্তকরণে সাহায্য করে, বিশেষত ৫০ বছরের বেশি বা ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস থাকা ব্যক্তিদের জন্য।
প্রোস্টেট ক্যানসার
বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যানসার প্রায়ই নীরবে বৃদ্ধি পায়। সতর্কতার লক্ষণগুলি হল:
স্রাব করতে সমস্যা, দুর্বল প্রস্রাব প্রবাহ বা রাতের বেলায় ঘন ঘন প্রস্রাব।
প্রস্রাব বা বীর্যে রক্ত।
পিঠ, কোমর বা পেলভিক অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা।
৫০ বছরের বেশি বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পুরুষদের জন্য পিএসএ ব্লাড টেস্ট এবং ডিজিটাল রেক্টাল পরীক্ষা প্রয়োজনীয়।
কেন প্রাথমিক শনাক্তকরণ গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিটি উপসর্গই ক্যানসার নির্দেশ করে না, তবে শরীরে স্থায়ী এবং অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন কখনও উপেক্ষা করা উচিত নয়। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সময়মতো শনাক্তকরণ নিশ্চিত করে এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।
