তেষ্টা পেলে সোডা কিংবা মিষ্টি ঠান্ডা পানীয় কিংবা প্যাকেটজাত জুস অথবা ঘন ঘন মিষ্টি দেওয়া চা-কফি খাওয়া, অনেকের জীবনেই অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের পানীয়র স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে জানা সত্ত্বেও ক'জনই বা তোয়াক্কা করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এসব মিষ্টি পানীয় শুধু ওজন বেড়ে যাওয়া বা ডায়াবেটিস নয়, চুল পড়াও বাড়াতে পারে, বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে টাক হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা প্রতিদিন একটির বেশি চিনিযুক্ত পানীয় পান করেন, তাদের ক্ষেত্রে ‘মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস’, অর্থাৎ সামনে ও মাথার মাঝ বরাবর চুল পাতলা হয়ে পড়ার সমস্যা ৪২% পর্যন্ত বেশি দেখা যায়। যদিও মিষ্টি পানীয় সরাসরি টাকের কারণ কিনা সেবিষয়ে এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, এই দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি পরিসংখ্যানগত ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে গবেষকরা কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছেন। যেমন- 

১. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহঃ অতিরিক্ত চিনি শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়। এই প্রদাহ ধীরে ধীরে চুলের ফলিকলকে দুর্বল করে, ফলে চুল পাতলা হয়ে যেতে থাকে।


২. হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট: উচ্চ মাত্রায় চিনি খেলে শরীরে হরমোনের ওঠানামা হয়। বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের পরিবর্তন চুল পড়ার সঙ্গে যুক্ত।


৩. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: চিনি বেশি খেলে ইনসুলিনের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া কমে যায়। এর ফলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের সমস্যার পাশাপাশি চুলের পুষ্টি সরবরাহ ব্যাহত হয়।


৪. পুষ্টির ঘাটতি: মিষ্টি পানীয় পেটে জায়গা দখল করে নেয়, ফলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের গ্রহণ কমে যায়। সুস্থ চুলের জন্য যেসব পুষ্টিগুণ অত্যন্ত জরুরি, সেগুলি শরীরে পূর্ণ মাত্রায় পৌঁছায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চুল পড়া বা টাক হওয়া শুধুই খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে না। এখানে জিনগত কারণ, বয়স, স্ট্রেস, হরমোনাল পরিবর্তন, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই শুধু মিষ্টি পানীয় কমালেই সব সমস্যা দূর হবে এমনটা নয়। তবে যদি চুল পড়া নিয়ে উদ্বেগ থেকে থাকে, তাহলে মিষ্টি পানীয়ের ব্যবহার কমানো একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। এক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলুন। যেমন- সোডা জাতীয় পানীয় খাওয়া কমিয়ে দিন, প্যাকেটজাত জুসের বদলে ফল খান, মিষ্টি কফি বা মিল্কশেক খাওয়া সীমিত করুন, তৃষ্ণা মেটাতে জল, ডাবের জল বা লেবুর জল বেছে নিন। এছাড়া খাদ্যতালিকায় রাখুন প্রোটিন, আয়রন, ওমেগা-৩, বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার। 

এবিষয়ে গবেষণা এখনও চলছে, তবে প্রাথমিক তথ্যগুলোই ইঙ্গিত দিচ্ছে, অতিরিক্ত চিনি শুধু শরীর নয়, আপনার চুলের ভবিষ্যতেও বড় ক্ষতি করতে পারে। চুল পড়া বা টাকের সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।