আজকাল ওয়েবডেস্ক: ‘ফ্যান’ শব্দটি এসেছে ‘ফ্যানাটিক’ শব্দটি থেকে। আর প্রকৃত ফ্যানরা বোধহয় এমনই পাগলামি করেন। টেক্সাসের এক একনিষ্ঠ পুতুল সংগ্রাহক সম্প্রতি শিরোনামে উঠে এসেছেন তাঁর সুপারম্যান ভক্তির কারণে। তাঁর সংগ্রহে নবতম সংযোজন, প্রাক্তন ‘সুপারম্যান’ অভিনেতা হেনরি ক্যাভিলের অবিকল মানুষের মতো দেখতে একটি পুতুল।
জেমস রবার্টসন-রিভিস এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ১৯৯১ সাল থেকে পুতুল সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। তার পর তাঁর কাছে ‘হাজার হাজার’ পুতুল রয়েছে। তিনি একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, ডিজনির অনুরাগী। পাশাপাশি বলাই বাহুল্য, হেনরি ক্যাভিলের (ম্যান অফ স্টিল, জাস্টিস লিগ, দ্য উইচার-এর অভিনেতা) একনিষ্ঠ ভক্ত।
সম্প্রতি রবার্টসন-রিভিস তাঁর প্রিয় ব্রিটিশ অভিনেতার একটি পূর্ণাবয়ব পুতুল বানানোর বরাত দেন। এই কাজের জন্য তিনি ইংল্যান্ডের ‘এসডি স্কাল্পট অ্যান্ড ডিজাইন’-এর শিল্পী স্টিভ ডেভিসের দ্বারস্থ হন।
সেই পূর্ণাবয়ব মূর্তি তথা পুতুলটির একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন নির্মাতা। অভিনেতার লোমশ হাত ও বুক-সহ প্রতিটি খুঁটিনাটি এতটাই নিখুঁত যে তা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ভিডিওটি। মূর্তিটি দেখে আপ্লুত রবার্টসন-রিভিসও। ২০০৭ সালে ‘স্টারডাস্ট’ ছবিতে প্রথমবার হেনরিকে দেখার পর থেকেই তিনি তাঁর অনুরাগী। রবার্টসন-রিভিসও নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টে মূর্তিটি তৈরির কিছু ভিডিও শেয়ার করেছেন, যা নিমেষেই ভাইরাল হয়ে যায়।
ইন্টারনেটে বহু নেটিজেন মন্তব্য করেছেন যে, পুতুলটি এতটাই জীবন্ত লাগছে যে সেটি কাছে থাকলে তাঁদের আর বাস্তব জীবনে প্রেমিকের প্রয়োজন হবে না।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। রবার্টসন-রিভিস সমকামী। ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাঁর স্বামীর সঙ্গে টেক্সাসে থাকেন তিনি। সেখানে নিজের বাড়িতেই ক্যাভিলের ওই মূর্তিটি রেখেছেন তিনি। শুধু মূর্তি তৈরি করেই থেমে থাকেননি রবার্টসন-রিভিস। তাঁর এই প্রিয় সংগ্রহের জন্য একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও খুলেছেন তিনি। এমনকি, কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনের নানা মুহূর্তের অনুকরণে মূর্তিটিকে আরও জীবন্ত করে তোলার চেষ্টাও করছেন। ফলে অনেকেরই মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটি কি নিছক পুতুল, নাকি সেটিকেই আদর করার ইচ্ছে জেগেছে তাঁর?
রবার্টসন জানিয়েছেন, এই প্রথম তিনি এত বড় আকারের পুতুল কিনেছেন। তাঁর কথায়, “আমার কাছে হ্যালোউইনের কয়েকটি অ্যানিমেট্রনিক্স আছে, কিন্তু জীবন্ত দেখতে মূর্তির মধ্যে একমাত্র হেনরিই রয়েছে।”
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
রবার্টসন-রিভিস বলেছেন, “আমরা ওকে সাজিয়ে রাখার জন্য কিনেছি। ও এক ধরনের ‘রুমমেট’। তবে আমরা এখন সহবাস করছি। সে কথা বলা যেতেই পারে।”
একটি ভিডিওতে মূর্তিটি পোশাকহীন অবস্থায় দেখা যায়, যেখানে কুঁচকির অংশে একটি সুপারম্যানের লোগো বসানো। এর আড়ালে কি কিছু ঢাকা হয়েছে? রবার্টসন-রিভিস স্পষ্ট করেন, “মূর্তিটি শারীরবৃত্তীয়ভাবে একেবারে ঠিকঠাক। কিন্তু এটি কোনও যৌন পুতুল নয়। সেই উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়নি।”
সম্প্রতি সেলিব্রিটিদের ঘিরে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই সপ্তাহেই প্রয়াত কৌতুকাভিনেতা রবিন উইলিয়ামসের মেয়ে তাঁর বাবার এআই-নির্মিত ভিডিও পাঠানো বন্ধ করার জন্য নেটিজেনদের কাছে আর্জি জানান। ইন্টারনেট মাইকেল জ্যাকসনের এআইতে তৈরি ভিডিওতে ছেয়ে গিয়েছে। রবিন-কন্যা জেল্ডা উইলিয়ামস এই প্রবণতাকে ‘জঘন্য’ এবং ‘বিরক্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। রবার্টসন-রিভিস অবশ্য মনে করেন, একজন অনুরাগী হিসেবে তিনি সম্মানজনকভাবেই এই কাজটি করছেন। তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছি যে প্রয়াত সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হতে পারে, কারণ তাঁরা সম্মতি দিতে পারেন না। কিন্তু জীবিত তারকারা সর্বসমক্ষে থাকেন। যদি আমরা প্রতারণা বা ঠকানোর জন্য এআই ব্যবহার না করি, তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারে কোনও ক্ষতি আছে বলে আমি মনে করি না। আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে তারকারা পূজনীয় এবং আমরা সকলেই তাঁদের জানতে, তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে, এমনকি তাঁদের ভালবাসতেও চাই। যদি এআই আপাতভাবে স্বপ্নকে সত্যি করতে পারে, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই।”
রবার্টসন-রিভিস তাঁর মূর্তির সঠিক দাম না জানালেও বলেছেন যে, এই ধরনের একটি মূর্তি বরাত দিয়ে তৈরি করতে সাধারণত ৭,০০০ থেকে ১২,০০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫.৮ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা) খরচ হতে পারে।
