বুকের মাঝে বা বাঁ দিকে ব্যথা হলে অনেকেই ঘাবড়ে যান। সাধারণত বুকের ব্যথা মানেই হৃদরোগ ভেবে নেওয়া হয়। তবে সব সময় তা নয়। অনেক সময় পাকস্থলী বা অন্ত্রে জমে থাকা গ্যাসও বুকের ব্যথার মতো অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। হঠাৎ বেশি খেয়ে ফেলা, খুব তাড়াহুড়া করে খাওয়া, বদহজম, অ্যাসিডিটি বা রিফ্লাক্স—সবই বুকের ভার, চাপ বা ব্যথার কারণ হতে পারে। তখন কী করবেন? কিছু সাধারণ ঘরোয়া উপায়েই এ ধরনের গ্যাসজনিত ব্যথা সামলানো সম্ভব।
গ্যাসের কারণে বুকের ব্যথা কেমন লাগে? কেন হয়?
গ্যাসের ব্যথা অনেক সময় তীব্র খোঁচা, চাপ বা হঠাৎ কাঁপুনির মতো অনুভূতি তৈরি করতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে উপরের পেটে ব্যথা শুরু হয়ে তা বুকের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাওয়া গিলে ফেলা, অতিরিক্ত বা খুব ঝাল–মশলাদার খাবার খাওয়া, তৈলাক্ত খাবার, কিংবা অ্যাসিড রিফ্লাক্সই এর প্রধান কারণ। GERD (গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ) হলে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীর দিকে উঠে আসে, ফলে জ্বালা, গ্যাস জমা এবং ভারী অনুভূতি হয়। পাকস্থলী বা কোলনে আটকে থাকা গ্যাসও চাপ বাড়িয়ে বুকের ব্যথার মতো অনুভূতি দিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করলে সাধারণত এ ধরনের ব্যথা দ্রুত উপশম হয়।
বুকের গ্যাসজনিত ব্যথা কমাতে ৫টি ঘরোয়া উপায়
গরম জলে জোয়ান
গ্যাস এবং বদহজম দূর করতে জোয়ান অত্যন্ত কার্যকর। এতে থাকা থাইমল হজম এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায়, ফলে খাবার সহজে ভাঙে। গরম জলে জোয়ান মিশিয়ে খেলে অন্ত্র শিথিল হয়, আটকে থাকা গ্যাস বেরিয়ে আসে এবং বুকের চাপ কমে।
লেবুজল
লেবুর এনজাইম অ্যাসিডিটি কমাতে এবং হজমে সাহায্য করে। হালকা গরম লেবুজল পেটে জমে থাকা গ্যাস, ফোলা এবং ভারী ভাব কমাতে পারে। খালি পেটে নিলে আরও উপকার মিলতে পারে।
গরম জল বা হারবাল টি
হারবাল টি হজমতন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পেপারমিন্ট টি অন্ত্রকে শিথিল করে গ্যাস বার হতে সাহায্য করে। ক্যামোমিল টি প্রদাহ কমায় এবং ফোলা ভাব কমায়। শুধু গরম জল খেলেও হজম ভাল হয় এবং বুকের টান কমে।
আদা
আদা হজম ভালো রাখে ও গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আদা পাকস্থলীর খালি হওয়ার গতি বাড়ায় এবং বদহজম সম্পর্কিত গ্যাস কমায়। আদা চা, কাঁচা আদা বা খাবারে আদা—যে কোনও ভাবে খেলে গ্যাসজনিত চাপ দ্রুত কমতে পারে।
মৌরি
মৌরিতে থাকা অ্যানেথল অন্ত্রের পেশি শিথিল করে এবং গ্যাস জমা কমায়। খাবারের পরে মৌরি চিবিয়ে খাওয়া বা মৌরি–চা পান করলে বুকের অস্বস্তি দ্রুত কমে।
আরও যেসব ঘরোয়া উপায় কাজে আসতে পারে
গরম সেঁক: পেটের পেশি শিথিল করে গ্যাস বার হতে সাহায্য করে।
স্ট্রেচিং বা হালকা যোগব্যায়াম: আটকে থাকা গ্যাস নড়াচড়া করে বেরিয়ে আসে।
গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস: ফোলা ভাব ও টান কমায়।
যে খাবার এবং অভ্যাসগুলি এড়িয়ে চলবেন
ঝাল, মশলাদার বা তেলেভাজা খাবার
গ্লুটেন এবং দুগ্ধজাত খাবার (যদি সমস্যা বাড়ায়)
ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং কার্বনেটেড ড্রিঙ্ক
অতিরিক্ত টক ফল (অ্যাসিডিটির সময় বিশেষ করে)
গ্যাসজনিত বুকের ব্যথা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, অত্যন্ত তীব্র হয় অথবা শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা বা হাত–কাঁধে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে—তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
