ঘোলা প্রস্রাব দেখা গেলে অনেকেই আতঙ্কিত হন। কিন্তু এটি সব সময় কোনও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ না-ও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এটি হালকা ডিহাইড্রেশন বা খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি সংক্রামণ বা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে।
হায়দরাবাদ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ নেফ্রোলজি অ্যান্ড ইউরোলজির কনসালট্যান্ট ইউরোলজিস্ট ডঃ গোপাল রামদাস তাক ঘোলা প্রস্রাবের সাধারণ কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন এবং প্রতিটি পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তা জানিয়েছেন।
ডিহাইড্রেশন
কারণ: পর্যাপ্ত জল না পান করলে প্রস্রাব ঘন হয়ে ঘোলা দেখাতে পারে।
কী করবেন: দৈনন্দিন জল গ্রহণ বাড়ান, বিশেষত শরীরকে হাইড্রেট রাখার জন্য। দিনে সাধারণত ৬–৮ গ্লাস জল খাওয়া উচিত, যদি না চিকিৎসক অন্য কোনও পরামর্শ দেন।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)
কারণ: প্রস্রাবনালীতে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ঘোলা প্রস্রাবের কারণ হতে পারে, সঙ্গে দুর্গন্ধ, তাড়াহুড়ো বা প্রস্রাব করার সময় পোড়ার অনুভূতি হতে পারে।
কী করবেন: ইউরোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্রাব পরীক্ষা করান এবং অ্যান্টিবায়োটিক নিন। যথেষ্ট জল পান করুন এবং চিকিৎসা সম্পূর্ণ করুন।
যৌন সংক্রমণ
কারণ: গনোরিয়া বা ক্ল্যামিডিয়া জাতীয় সংক্রমণ প্রস্রাবনালীকে প্রভাবিত করতে পারে, ফলে তরল নির্গমন বা ঘোলা প্রস্রাব দেখা দিতে পারে।
কী করবেন: এসটিআই-এর জন্য পরীক্ষা করান। প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক নিন। সাম্প্রতিক সঙ্গীদের জানিয়ে দিন এবং সুস্থ হওয়া পর্যন্ত যৌন সম্পর্ক এড়ান।
কিডনির পাথর
কারণ: ছোট পাথর প্রস্রাবনালীকে উত্তেজিত করতে পারে, ফলে রক্তপাত, ঘোলা প্রস্রাব এবং প্রচণ্ড ব্যথা বিশেষত পিঠে হতে পারে।
কী করবেন: ইউরোলজিস্টের কাছে যেতে হবে এবং আলট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যানের মতো ইমেজিং পরীক্ষা করাতে হবে। ছোট পাথর পাস করতে প্রচুর জল পান করুন। গুরুতর ক্ষেত্রে ওষুধ বা পাথর অপসারণের প্রক্রিয়া প্রয়োজন হতে পারে।
প্রস্রাবের অতিরিক্ত প্রোটিন (প্রোটিনুরিয়া)
কারণ: কিছু কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা প্রোটিনকে প্রস্রাবের মধ্যে ঢুকতে দেয়, ফলে এটি ফেনাযুক্ত বা ঘোলা দেখায়।
কী করবেন: প্রস্রাবের প্রোটিন পরীক্ষা করান। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রয়োজনে নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
ঘোলা প্রস্রাব দেখা মানেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে এটি আপনার শরীরের একটি সঙ্কেত। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়া, স্বাস্থ্য সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো সচেতন হওয়া এবং শরীরের সঙ্কেত গুরুত্ব দেওয়া যে কোনও বড় সমস্যার থেকে রক্ষা করতে পারে, তাই ছোটখাট উপসর্গকে অবহেলা করা ঠিক নয়।
