আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স পঁচাত্তর। কিন্তু মনটা যেন ২৫। এই বয়সেই অনলাইন ‘সুন্দরীর’ প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন চীনের বাসিন্দা জিয়াং। প্রেমিকার স্নেহমাখা কথায় এতটাই মজেছেন বৃদ্ধ যে, দীর্ঘদিনের স্ত্রীকে বিচ্ছেদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন। অথচ, যাঁর জন্য এই চরম পদক্ষেপ, তিনি রক্তমাংসের মানুষ নন, নিছকই এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই! এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে চীনের সমাজমাধ্যমে।
 
 জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধ ভার্চুয়াল জগতের এআই ‘মহিলা’র কথাই বেদবাক্য বলে মনে করছেন। ভিডিয়োতে কথার সঙ্গে ঠোঁট না মিললেও, সেই অসঙ্গতি তাঁর চোখে পড়েনি। প্রতিদিন অধীর আগ্রহে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকেন, কখন তাঁর ‘প্রেমিকা’ নতুন কোনও বার্তা পাঠাবেন, এই ভেবে।
 
 
 আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় মরেননি, জেতেন ৫ কোটির লটারি! সাতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা বিশ্বের সবচেয়ে ‘লাকি’ ব্যক্তি ইনি
 
 আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
 
 
 তবে এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। চিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি হওয়া বিভিন্ন বিষয়বস্তু বা কনটেন্টের রমরমা বাড়ছে। বহু প্রবীণ, বিশেষত যাঁরা একাকিত্বে ভোগেন বা যাঁরা বার্ধক্যের কারণে গৃহবন্দি, তাঁরাই মূলত এই প্রযুক্তির মোহে জড়িয়ে পড়ছেন। পরিবারের সদস্যরা বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নির্মিত চরিত্রগুলির দেখানো নকল স্নেহ-ভালবাসাকেই আঁকড়ে ধরছেন তাঁরা।
 
 প্রসঙ্গত, এই এআই নির্মিত চরিত্রগুলিকে নানা রূপে পেশ করা হয়। সুন্দরী সঞ্চালিকা থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী বা কেতাদুরস্ত পুরুষ, সবেরই দেখা মেলে নেটমাধ্যমে। প্রবীণ মহিলাদের মধ্যে আবার পেশাদার চেহারার পুরুষ চরিত্রটি বেশ জনপ্রিয়।
 
 কিন্তু এই আপাতস্নেহের আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক গভীর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য। নানা আবেগঘন কথার জালে ফাঁসিয়ে প্রবীণদের বিভিন্ন জিনিস কিনতে প্ররোচিত করা হয়। ব্রেসলেট থেকে দুধ, বিক্রি হয় সবই। কিন্তু আদতে সেই সব পণ্যের কোনও অস্তিত্বই নেই। মানসিক দুর্বলতার কারণে মানুষগুলি প্রতারণার শিকার হয়ে অর্থ খোয়ান।
 
 
চীনের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রশাসন ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখছে বিষয়টি। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সতর্কবার্তাও দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিকে যেমন প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে এসেছে, তেমনই এর ভুল প্রয়োগ সাধারণ মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর ফলে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, এক অস্বাস্থ্যকর মানসিক নির্ভরশীলতাও তৈরি হচ্ছে, যা সমাজের জন্য অশনি সঙ্কেত। ওই বৃদ্ধের ঘটনা সেই বিষয়টিকেই আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
