আজকাল ওয়েবডেস্ক: নারী প্রজননব্যবস্থাকে ঘিরে দীর্ঘদিনের একটি মিথ হচ্ছে—শুক্রাণুরা একপ্রকার দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমে ডিম্বাণুর দিকে ছোটে, আর ডিম্বাণু নীরবে অপেক্ষা করে “বিজয়ী” শুক্রাণুটির জন্য। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান এই ধারণাকে বহুবার ভুল প্রমাণ করেছে। ২০২৫ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞান লেখক স্টার ভার্টানের নতুন বই The Stronger Sex: What Science Tells Us about the Power of the Female Body এই মিথ ভাঙারই প্রচেষ্টা। বইটিতে দেখানো হয়েছে, নারীদের দেহ ও প্রজনন ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রচলিত অনেক ভুল তথ্যই এসেছে পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে, যা বিজ্ঞানের যথাযথ অনুসন্ধানে টিকছে না।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক বুকারজয়ী কন্নড় সাহিত্যিক ভানু মুশতাক দিল্লিতে – সাহিত্যের আলোচনায় উঠে আসবে ‘আমাদের ভারত’ ও নারীর ভেতরজগৎ

ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী লিনেট সিভার্ট ব্যাখ্যা করেন, স্তন্যপায়ীদের প্রজনন কৌশল অনেকটা বিবর্তনের ফসল—যেখানে ডিম্বাণু একসঙ্গে অনেক তৈরি না হয়ে একটিমাত্র করে হয় এবং সেটিকে ঘিরেই চলে প্রতিযোগিতা। বিপরীতে মাছ, উভচর, ও সরীসৃপরা জীবনভর ডিম ও শুক্রাণু তৈরি করে যায়, অনেকটা সংখ্যার খেলায় জয়লাভের উদ্দেশ্যে। কিন্তু স্তন্যপায়ীরা এ পথ থেকে সরে এসে ডিম্বাণুর মান, গুণগত নির্বাচন এবং উপযুক্ত পরিবেশে প্রজননের দিকে ঝুঁকেছে।

আরও পড়ুন: কন্ডোম চুরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে উড়ে গেল জীবন! মৃত্যু যুবকের

বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, শুধু শুক্রাণু নয়, ডিম্বাণুই বরং নির্ধারণ করে কাকে গ্রহণ করবে। ১৯৮০-এর দশকে প্রথম দেখা যায়, ডিম্বাণুর বাইরের আবরণ (zona pellucida) একধরনের রাসায়নিক পরীক্ষা চালায় শুক্রাণুর উপর। উপযুক্ত না হলে প্রত্যাখ্যানও করে। ২০২০ সালে স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গবেষণায় দেখা যায়, ডিম্বাণু এক ধরনের রাসায়নিক সংকেত ছড়িয়ে দেয়, যেটা নির্দিষ্ট শুক্রাণুকে আকৃষ্ট করে।

আরও পড়ুন: গ্রাম জুড়ে কামের ফাঁদ! বিশ্বের ‘সবচেয়ে বড়’ কামোৎসবে নামমাত্র টাকায় এন্ট্রি ফি!

অবাক করার মতোভাবে দেখা গেছে, অনেক সময় এই সংকেত সঙ্গীর শুক্রাণু নয়, বরং অন্য শুক্রাণুকে বেশি আকর্ষণ করে। এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, ডিম্বাণু নিজের পছন্দমতো শুক্রাণু “বেছে নেয়”। এবং সেই পছন্দ হতে পারে জিনগত সামঞ্জস্য, গুণগত মান কিংবা পরিবেশগত উপযোগিতার ভিত্তিতে। এই বৈজ্ঞানিক সত্য দীর্ঘদিন ধরে “পুনরাবিষ্কৃত” হচ্ছে, কারণ সমাজে পুরুষতান্ত্রিক বর্ণনাই বেশি জায়গা করে নিয়েছে। তবে এখন সময় এসেছে এই পুরনো ধারণা ভেঙে নারীদেহের জটিলতা ও শক্তিকে বুঝে দেখার।

 নারীশরীর কেবলই জন্মদানের যন্ত্র নয়—তা নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা, ক্ষমতা ও নির্বাচনের অধিকার নিয়ে কাজ করে, বিজ্ঞানের নতুন গবেষণা আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে, যে ডিম্বাণু শুধুই প্যাসিভ নয়; বরং এটি একটি সক্রিয়, সচেতন অংশগ্রহণকারী, যা ভবিষ্যৎ সন্তানের সম্ভাব্য গুণমান নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ফলে নারীদেহ ও তার প্রজনন কৌশলকে হেয় করে দেখা নয়, বরং সম্মান ও গুরুত্ব দিয়েই দেখা উচিত।