আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিউ ইয়র্কের নতুন মেয়র জোহরান মামদানী এখন শুধু রাজনীতিক নন, তিনি এক সাংস্কৃতিক ধারায় বটে  বয়স মাত্র ৩৪। চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার ও বিশিষ্ট অধ্যাপক মাহমুদ মামদানীর পুত্র এই তরুণ নেতা রাজনীতির প্রচলিত ছক ভেঙে ফেলেছেন— প্রেস কনফারেন্সের বদলে করেছেন রিলস, বক্তৃতার বদলে নেচেছেন সালসা, বলেছেন হিন্দিতে, গেয়েছেন র‍্যাপে।

“My name is Mamdani” — নাম থেকেই শুরু

নিজের নামকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু এম. কুয়োমোর ইচ্ছাকৃত ভুল উচ্চারণে (তিনি “মা আ আ ম দা মি” বলতেন) ক্ষুব্ধ হয়ে জোহরান বলেন, “নামটা ঠিক করে বলুন— এম–এ–এম–ডি–এ–এন–আই। আপনি শেখা উচিত কীভাবে উচ্চারণ করতে হয়।” এরপর থেকেই “My name is Mamdani” হয়ে যায় তাঁর স্লোগান। সেই স্লোগানের ছন্দেই নিউ ইয়র্কের মেয়র পদের চূড়ায় উঠেছেন তিনি।

ডিজিটাল যুগের প্রচার কৌশল

জোহরান বুঝেছিলেন— রাজনীতি এখন মনোযোগের অর্থনীতিতে আবদ্ধ। তাই তিনি এই ‘attention economy’-কেই নিজের পক্ষে কাজে লাগান। তাঁর প্রথম প্রচার ভিডিও— লো-ফাই সাউন্ডট্র্যাকের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তিনি বলছেন জীবনযাত্রার ব্যয়, ভাড়ার সমস্যা, ও সাধারণ মানুষের সংগ্রামের কথা। ভিডিওটি ছিল স্টাইলিশ, কিন্তু বার্তা ছিল স্পষ্ট: “affordability” বা নাগরিক জীবনের নাগালের মধ্যে থাকা। তিনি কখনও ম্যারাথনে দৌড়েছেন, কখনও পোষা বিড়ালের দোকানে শুট করেছেন, কখনও আবার রাস্তার অপরিচিতদের জড়িয়ে ধরেছেন। ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সালসা নাচ, টাই চি অনুশীলন, এমনকি কাবাব কিং-এর বিরিয়ানিও।

ভাইরাল হল ‘চিপস-কাণ্ড’

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি হাতে হেয়ার’স সাওর ক্রিম ও অনিয়ন চিপসের ব্যাগ নিয়ে আছেন। সেটি ছিল তৎকালীন মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রচার শিবিরে ঘটে যাওয়া এক দুর্নীতির ইঙ্গিত— যেখানে সাংবাদিককে ওই ব্র্যান্ডের চিপসের ব্যাগে টাকা ভর্তি খাম দেওয়া হয়েছিল।
মামদানীর ভিডিওটি ছিল রসিকতাপূর্ণ, কিন্তু শেষ ছিল আহ্বানে ভরা— “আগামীকাল নিউ ইয়র্ক জুড়ে শুরু হচ্ছে স্ক্যাভেঞ্জার হান্ট!”

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিডিওর ভিউ পৌঁছায় ২০ লক্ষে, লাইক ২ লক্ষ ৪৫ হাজারের বেশি। পরদিন হাজার হাজার নিউ ইয়র্কবাসী নেমে পড়েন শহর জুড়ে সেই “হান্ট”-এ।

‘দিওয়ার’ থেকে ‘আপকা টাইম আগয়া’

তাঁর প্রচারের বহু ভিডিওতেই বলিউডের সংলাপ, গান ও রেফারেন্স ব্যবহার হয়েছে।
এক ভিডিওতে তিনি ব্যবহার করেন অমিতাভ বচ্চনের দেওয়াল ছবির বিখ্যাত সংলাপ—
“আজ আমার কাছে বিল্ডিং আছে, প্রপার্টি আছে, গাড়ি আছে, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স আছে… তোমার কাছে কী আছে?”
এর উত্তরে মামদানী শাহরুখ খানের ভঙ্গিতে হাত মেলে বলেন— “আপ!”

অন্য এক ক্লিপে তিনি বলেন, “বিলিয়নিয়ারদের সব কিছুই আছে। এখন আপকা টাইম আগয়া। আমরা ভাড়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনব, সর্বনিম্ন মজুরি বাড়াব, ২ মিলিয়নেরও বেশি ভাড়াটিয়ার জন্য রেন্ট ফ্রিজ করব, এবং ২ লক্ষেরও বেশি সাশ্রয়ী বাড়ি নির্মাণ করব।”

জয়ের মুহূর্তে বলিউড উৎসব

ভোটফল ঘোষণার রাতটি ছিল নিউ ইয়র্কে এক বলিউডীয় উদযাপন। ভিড়ের সামনে মামদানী বলেন, “নিউ ইয়র্ক, এই ক্ষমতা— তোমার। এই শহর তোমারই।” এবং ঠিক সেই মুহূর্তে বাজতে শুরু করে ধুম মাচালে গানের তীব্র বিট! এক্স-এ এক ব্যবহারকারী লেখেন, “সম্ভবত নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে কোনো মেয়রের জয়োৎসবে এতটা আইকনিক কিছু ঘটেনি।”

এক নতুন রাজনৈতিক ভাষা

জোহরান মামদানী রাজনীতিতে শুধু এক তরুণ মুখ নন, বরং এক নতুন রাজনৈতিক ব্যাকরণ তৈরি করেছেন— যেখানে হিপহপ, বলিউড, সামাজিক ন্যায় ও ডিজিটাল কৌশল একে অপরের পরিপূরক। তাঁর রাজনীতি শহরের প্রান্তিক ও তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে এক নতুন সংযোগ তৈরি করেছে। “রাজনীতি যদি মানুষের জন্য হয়,” তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “তবে সেটি অবশ্যই মানুষের ভাষায় বলা উচিত।” এভাবেই টাই চি থেকে দেওয়াল পর্যন্ত — জোহরান মামদানী নিউ ইয়র্কের রাজনীতিকে ভাইরাল করেছেন, আর সেই সঙ্গে প্রমাণ করেছেন, রাজনীতি শুধু ভাষণের নয়, সংস্কৃতিরও লড়াই।