আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারজয়ী বিশিষ্ট কন্নড় সাহিত্যিক ভানু মুশতাক ১৯ জুলাই, শনিবার, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি বিশেষ সাহিত্যসভায় অংশগ্রহণ করতে চলেছেন। ‘নাম্মা ইন্ডিয়া’ — কন্নড় ভাষায় যার অর্থ ‘আমাদের ভারত’ — এই শিরোনামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিটে, জওহর ভবনে। প্রবেশ সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং বিনামূল্যে। মুশতাকের সঙ্গে এই গভীর সাহিত্য-আলাপচারিতায় সংলাপ পরিচালনা করবেন প্রথিতযশা সাংবাদিক আরফা খানুম শেরওয়ানি।

এই বছর মুশতাক ও তাঁর অনুবাদক দীপা ভাসথি আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার লাভ করেন Heart Lamp নামক ছোটগল্প সংকলনের জন্য, যা মূলত কন্নড় ভাষায় রচিত ও ইংরেজিতে অনূদিত। এটি দক্ষিণ এশীয় ভাষার দ্বিতীয় বই, যা এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করল। প্রথমবার এই সম্মান অর্জন করেছিলেন গীতাঞ্জলি শ্রী এবং ডেইজি রকওয়েল, হিন্দি উপন্যাস রেত সামাধি (ইংরেজি অনুবাদ Tomb of Sand) দিয়ে।

ভানু মুশতাকের সাহিত্য তার ব্যক্তিগত জীবনের মতোই বহুমাত্রিক। লেখিকার শুরুটা হয়েছিল ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে, কন্নড়ের প্রগতিশীল সাহিত্য আন্দোলনের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন ‘বান্দায়া সাহিত্য আন্দোলন’-এর একজন অন্যতম কণ্ঠ, যা সমাজের নিপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের কথা তুলে ধরতে সাহিত্যকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন আইনজীবী ও সমাজকর্মী। লেখার পাশাপাশি সমাজে বাস্তব পরিবর্তনের জন্য মাঠেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি কর্ণাটক সাহিত্য অ্যাকাডেমি ও দানা চিন্তামণি আত্তিমব্বে পুরস্কার লাভ করেন।

Heart Lamp বইয়ে নারী জীবনের জটিলতা, তাদের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন, মনস্তাত্ত্বিক আবেগ ও সামাজিক চাপে নিরবভাবে বয়ে চলা সংগ্রামকে তুলে ধরেছেন মুশতাক। তাঁর লেখায় দেখা যায় সাধারণ নারীর অসাধারণ লড়াই— একদিকে নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা ও অন্যদিকে সামাজিক শৃঙ্খলার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার অদৃশ্য যুদ্ধ। তাঁর ভাষা কাব্যিক, তীব্র অথচ সংবেদনশীল। মুশতাক এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করেন যা সমাজের মূল স্রোতের বাইরের মানুষদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: চিকেন বিক্রিতে আপত্তি, উত্তরপ্রদেশে কেএফসি আউটলেটে হিন্দুত্ববাদীদের হামলা! 

পুরস্কার গ্রহণের সময় তাঁর বক্তব্য ছিল আরও উদ্দীপনাময় ও গভীর মানবিকতায় ভরা। তিনি বলেছিলেন, “এই স্বীকৃতি কেবল আমার একার নয়। এটি একটি বৃহত্তর উপলব্ধি — যে বৈচিত্র্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে, একে অপরকে তুলে ধরে, আমরা এমন একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারি যেখানে প্রতিটি কণ্ঠস্বর শোনা যায়, প্রতিটি অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ, এবং কেউই উপেক্ষিত থাকে না।”

২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতেছিলেন ব্রাজিলীয় লেখক ইটামার ভিয়েরা জুনিয়র, তাঁর পর্তুগিজ ভাষায় রচিত উপন্যাস Torto Arado বা ইংরেজিতে Crooked Plow এর জন্য। বইটির অনুবাদ করেন জনি লরেন্স এবং র‍্যাচেল ম্যাসিন। সে উপন্যাসেও উঠে এসেছিল নিপীড়িত কৃষিজীবী মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই — এক অন্যরকম আবহে কিন্তু একইরকম মানবিকতা ও বাস্তবতার গভীর ছোঁয়া।

ভানু মুশতাকের দিল্লির এই সাহিত্য-আলোচনায় অংশগ্রহণ দেশজ ও আন্তর্জাতিক পাঠকদের জন্য এক বিরল সুযোগ — তাঁর চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও সাহিত্যভাবনা সরাসরি জানার এক বিরল সন্ধ্যা। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কন্নড় সাহিত্য বিশ্বে আরও একধাপ এগিয়ে গেল — এবং ভানু মুশতাক হয়ে উঠলেন ভারতীয় ভাষার গর্বিত প্রতিনিধি, যিনি দেখিয়ে দিলেন: ভাষা যতই আঞ্চলিক হোক, সাহিত্যের সত্য সর্বজনীন।