রান্নাঘরের আসল স্বাদ শুধু উপকরণে নয়, লুকিয়ে আছে বাসনপত্রের সঠিক ব্যবহারে। কিন্তু সব রান্নার বাসন সমান নিরাপদ নয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—কিছু বাসন তাপে গরম হলে বা দীর্ঘদিন ব্যবহারে শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক ছড়াতে পারে। শুরুতে এর প্রভাব বোঝা না গেলেও, ধীরে ধীরে তা শরীরে জমে ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অর্থাৎ, প্রতিদিনের রান্নার সঙ্গেই অজান্তে জুড়ে যেতে পারে বড়সড় বিপদ।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. তরঙ্গ কৃষ্ণ সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে তাঁর সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের রান্নাঘরে প্রতিদিন ব্যবহার করা কিছু পাত্র-প্রসাধনই অজান্তে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। তিনি তিন ধরনের ক্ষতিকর কিচেনওয়্যারের নাম উল্লেখ করে সতর্ক করেছেন। পাশাপাশি নিরাপদ বিকল্প এবং সহজ কৌশলও বাতলে দিয়েছেন, যেগুলি মেনে চললে পরিবারের সুস্থ এবং ক্যানসারমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র রান্নাঘর থেকে সরিয়ে ফেলুন।” রান্নার হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে ফয়েল র্যাপ—অ্যালুমিনিয়াম আমাদের রান্নাঘরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ধাতুগুলির একটি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে রান্না করলে এক থেকে দু’মিলিগ্রাম ধাতু খাবারের সঙ্গে মিশে যায়, যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরে জমে বিষক্রিয়া বাড়াতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাবে কোষের পরিবর্তন ঘটে এবং ক্যানসার সেল তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
টেফলন দিয়ে কোট করা হাঁড়ি-পাতিল বা ফ্রাইপ্যান অনেকেই ব্যবহার করেন, কিন্তু এগুলোর যত্ন না নিলে তা বিষে পরিণত হতে পারে। ডা. তরঙ্গ কৃষ্ণা বলছেন, “টেফলনের পাত্রে যদি স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের স্ক্রাবার দিয়ে ঘষা হয়, তা হলে সেটি বিষের সমান হয়ে ওঠে।” কারণ টেফলনের আস্তরণ উঠে গেলে ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবারে মিশে যায়। দীর্ঘদিন খেলে শরীরে বিষক্রিয়া জমে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। শুধু তাই নয়, বেশি তাপে রান্না করলে এসব পাত্র থেকে ক্ষতিকর ধোঁয়া বেরোয়, যা ফ্লুর মতো লক্ষণ তৈরি করে— জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা ইত্যাদি।
চিকিৎসক সতর্ক করে বললেন, “প্লাস্টিকের বাসনপত্র ফেলে দিন।” কারণ অনেক ধরনের প্লাস্টিক—বিশেষ করে কালো রঙের প্লাস্টিকের ভিতরে থাকে ফ্লেম রিটারড্যান্টস নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক। এগুলো পাত্রকে আগুনে টেকসই করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যখন গরম খাবার তাতে রাখা হয় বা রান্না করা হয়, তখন এই বিষাক্ত উপাদান খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে শরীরে তৈরি হতে পারে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ডা. কৃষ্ণা পিতল, কাস্ট আয়রন আর লোহার কড়াই ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “যতই আমরা আধুনিক জীবনের দিকে দৌড়াই, সমস্যাও ততই বাড়ে।”
