ডিম স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় বহুদিন ধরেই ‘সুপারফুড’ হিসাবে পরিচিত। কম খরচে উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন এবং প্রয়োজনীয় নানা পুষ্টিগুণের উৎস হিসেবে ডিমের তুলনা হয় না। রান্নার দিক থেকেও ডিম অত্যন্ত সহজ ও বহুমুখী উপাদান।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তবে ডিম নিয়ে বিতর্ক বেড়েছে। স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই এখন কুসুম বাদ দিয়ে কেবল ডিমের সাদা অংশ খেতে শুরু করেছেন—ওজন কমানো বা সহজ হজমের আশায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, কুসুমেই লুকিয়ে আছে ডিমের আসল পুষ্টি।

কুসুম কেন জরুরি—বলছেন ডাক্তার

দিল্লির গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ও হেপাটোলজিস্ট ডা. শুভম ভাটস্যা জানিয়েছেন, ডিমের কুসুমকে ভয় পাওয়াটা ‘সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তি’। তাঁর মতে, শরীরে কোলেস্টেরলের ৮০ শতাংশ লিভার থেকেই তৈরি হয়। তাই খাবার থেকে পাওয়া কোলেস্টেরল—বিশেষ করে ডিমের কুসুম—রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রায় তেমন প্রভাব ফেলে না।

তিনি জানান, ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় না। বরং কুসুমে থাকা ভাল কোলেস্টেরল বা এইচডিএল, লুটেইন, কোলিন এবং নানা ভিটামিন হৃদপিণ্ড, লিভার ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।

ডা. ভাটস্যার মতে, সমস্যা ডিমে নয়, রান্নার পদ্ধতিতে। অনেকে মাখন, ক্রীম বা অতিরিক্ত তেলে ডিম রান্না করেন—যা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তিনি পরামর্শ দেন, যাঁদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নেই, তাঁরা প্রতিদিন তিনটি সম্পূর্ণ ডিম খেতে পারেন।

সেদ্ধ ডিমে কী পুষ্টিগুণ থাকে

ওয়েবএমডি-র তথ্য অনুযায়ী, একটি হার্ড–বয়েলড ডিমে পাওয়া যায়—
ক্যালোরি: ৭৭
মোট ফ্যাট: ৫.৩ গ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১.৬ গ্রাম
কোলেস্টেরল: ১৮৬ মিগ্রা
সোডিয়াম: ৬২ মিগ্রা
কার্বোহাইড্রেট: ০.৫৬ গ্রাম
চিনি: ০.৫৬ গ্রাম
প্রোটিন: ৬.৩ গ্রাম
এ ছাড়া ডিমে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ, হাড়ের স্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং ত্বকের পুষ্টিতে সাহায্য করে।

ডিমের কুসুম নিয়ে ভীতি বা ভুল ধারণার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই—বরং কুসুমই ডিমকে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং উপকারী খাবারে পরিণত করে। অবশ্যই সঠিক উপায়ে রান্না করা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখা জরুরি। মোটের উপর, পরিমিত পরিমাণে সম্পূর্ণ ডিম খেলে পুষ্টি, শক্তি ও সামগ্রিক সুস্থতার দিকে আরও একধাপ এগোনো যায়।