ক্রমশ নামছে তাপমাত্রার পারদ। শীতের আমেজ ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসছে। আর শীত বাড়তেই সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে নানা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এই সময়ে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন বাড়তি সুরক্ষা, তবে সেটি জটিল হওয়া জরুরি নয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ, আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক দৈনন্দিন অভ্যাস শরীরকে ভেতর থেকে চাঙ্গা করতে পারে। বিশেষ করে প্রবীণ, শিশু ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এমন রুটিন অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করা হয়।
প্রথম তালিকায় রয়েছে বোন ব্রথ বা ভেজিটেবল ব্রথ, যা অনেকেই ‘লিকুইড গোল্ড’ নামে চেনেন। পুষ্টিবিদদের মতে, এটি খনিজ, কোলাজেন ও অ্যামিনো অ্যাসিডে সমৃদ্ধ এক সুপারফুড। শীতের দিনে এক বাটি গরম বোন ব্রথ শরীরকে উষ্ণ রাখার পাশাপাশি গাট লাইনিংকে সুরক্ষা দেয়, যা আসলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এটি পান করলে হজমশক্তি উন্নত হয়, শরীর পায় পর্যাপ্ত হাইড্রেশন ও এনার্জি।
দিনের শুরুতে গরম জলে লেবু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাসকেও বিশেষজ্ঞরা অত্যন্ত কার্যকর বলে মনে করেন। রাতভর ঘুমের পর শরীর যখন শুষ্ক হয়ে পড়ে, তখন এই পানীয়টি দ্রুত হাইড্রেশন ফিরিয়ে আনে। লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং সকালে লিভার ও হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করে তোলে। অনেকের মতে, শীতের সময় যে ভারীভাব বা অলসতা আসে, তা কমাতে এই পানীয়টি বেশ কাজে দেয়।
আরও এক জনপ্রিয় ঘরোয়া রেসিপি হল মধুর সঙ্গে রসুন। গবেষকরা বলছেন, রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান শরীরে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক। অন্যদিকে, মধু গলায় সংক্রমণ রোধ করে, খনিজে সমৃদ্ধ এবং দেহকে প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষা দেয়। দুটিকে একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে তা শীতকালের জন্য প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ঢাল তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞরা শীতকালে বাড়ির পরিবেশেও সামান্য পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন। শুষ্ক বাতাসে ভাইরাস দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকতে পারে, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা, বা অন্তত এক বাটি জল ঘরের কোণায় রেখে বাতাস আর্দ্র রাখা উপকারী হতে পারে। এতে নাসারন্ধ্রের শুষ্কতা কমে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।
শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে বড় কোনও পরিবর্তন নয়, বরং ছোট ছোট অভ্যাসই শীতে বড় ভূমিকা রাখে। নিয়মিত গরম খাবার, প্রাকৃতিক উপাদান, পর্যাপ্ত জলপান এবং পরিবেশের আর্দ্রতা বজায় রাখাই বাড়াতে পারে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা। শীতের দিনগুলোতে সুস্থ থাকতে তাই জটিল ডায়েট নয়, বরং ঘরোয়া রুটিনই যথেষ্ট।
