আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়ির উঠোনে বা ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমে ছোট্ট শিশুর সঙ্গে আদরের কুকুরছানা বা বিড়ালের খুনসুটির দৃশ্য মন ভাল করে দেয়। পোষ্যরা শিশুদের একাকিত্ব দূর করে, তাদের দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল করে তোলে। এই অবলা বন্ধুরা নিঃসন্দেহে পরিবারেরই সদস্য। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। পোষ্যদের থেকে শিশুদের শরীরে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়, যা নিয়ে অনেক অভিভাবকই সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নন। এর অর্থ পোষ্য রাখা বিপজ্জনক তা নয়, বরং প্রয়োজন সঠিক সতর্কতা এবং সচেতনতার।
চিকিৎসকদের মতে, যে সমস্ত রোগ প্রাণীদেহ থেকে মানুষের দেহে ছড়ায়, তাদের ‘জুনোটিক ডিজিজ’ বলা হয়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম হওয়ায় এবং পোষ্যদের সঙ্গে খেলার সময় পরিচ্ছন্নতার নিয়মকানুন ভুলে যাওয়ায়, তাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি থাকে।

সাধারণ কিছু রোগ ও তার উৎস
কৃমি সংক্রমণ: এটি সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা। কুকুরের মল থেকে গোলকৃমি বা বক্রকৃমি-র লার্ভা মাটিতে মিশে যায়। সেই মাটিতে খেলার পর ভাল করে হাত না ধুয়ে শিশুরা খাবার খেলে বা মুখে হাত দিলে এই কৃমি শরীরে প্রবেশ করে। এর ফলে পেটে ব্যথা, অপুষ্টি এবং রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ: বিড়ালের আঁচড় বা কামড় থেকে ‘বারটোনেলা হেনসেলি’ নামক ব্যাকটেরিয়া শিশুদের দেহে ছড়াতে পারে। এর ফলে ক্ষতস্থান ফুলে যায়, জ্বর আসে এবং নিকটবর্তী লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে।
টক্সোপ্লাজমোসিস: মূলত বিড়ালের মল থেকেই এই পরজীবীঘটিত রোগটি ছড়ায়। বাড়ির বিড়াল বাইরে গেলে বা কাঁচা মাংস খেলে তার এই পরজীবীর দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সংক্রমিত বিড়ালের মল পরিষ্কার করার সময় বা সেই মাটি ঘাঁটলে এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
দাদ: নামের সঙ্গে ‘ওয়ার্ম’ বা কৃমি থাকলেও এটি আসলে এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ। সংক্রমিত কুকুর বা বিড়ালের সংস্পর্শে এলে শিশুদের মধ্যে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ত্বকে গোল হয়ে লাল চাকা চাকা দাগ তৈরি করে।
র্যাবিস বা জলাতঙ্ক: কুকুর, বিড়াল বা অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কামড় থেকে ছড়ানো সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ এটি। সঠিক সময়ে প্রতিষেধক না নিলে এই রোগ ১০০ শতাংশ প্রাণঘাতী। অর্থাৎ একবার এই রোগ দেখা দিলে বাঁচার কোনও আশা নেই।
কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। সহজ কিছু নিয়ম মানলেই এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
১। পোষ্যের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং টিকাকরণ অত্যাবশ্যক। পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
২। পোষ্যকে ছোঁয়ার পর, বিশেষত খাবার খাওয়ার আগে শিশুদের ভাল করে হাত ধোওয়ার অভ্যাস করাতে হবে।
৩। পোষ্যের মলমূত্র সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করতে হবে এবং সেই জায়গাটি জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৪। শিশুদের পোষ্যের মুখে মুখ দেওয়া বা খাবার ভাগ করে খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
পোষ্য এবং শিশু উভয়ের সুস্থতাতেই পরিবারের আনন্দ। তাই ভয় না পেয়ে, সঠিক নিয়মকানুন মেনে চললেই এই বন্ধুত্ব থাকবে সুরক্ষিত এবং নির্মল।
