শীতের সময় ঠান্ডায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে ক্লান্তি, সর্দি-কাশি বা সংক্রমণের মতো সমস্যা বাড়তে পারে। তাই শীতে কী খাবেন, তা যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি গরম এবং শক্তি ধরে রাখার জন্য সঠিক খাবার বেছে নেওয়া। শীতকালে অনেক পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু স্ন্যাকস পাওয়া যায়। তার মধ্যে গুড় এবং ছোলা বহু বছর ধরে ভারতের ঘরোয়া সুপারফুড হিসেবে জনপ্রিয়। এটি শরীর গরম রাখে, শক্তি বাড়ায় এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন–মিনারেলে ভরপুর।

কেন খাবেন গুড়–ছোলা?

আখ বা খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা পরিশোধিত চিনির তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর। এতে থাকে মিনারেল এবং ভিটামিন, যা চিনির রিফাইনিং প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে, ছোলা হল উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, ফাইবার এবং নানা পুষ্টির অসাধারণ উৎস।

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ড. উৎকর্ষ বাজপেয়ী বলেন, “গুড় আর ছোলা একসঙ্গে খেলে শরীরে তাপ, শক্তি ও পুষ্টির দারুণ যোগান পাওয়া যায়।”

বর্তমানে গুড়–ছোলা ভাজা স্ন্যাকস হিসাবেও বাজারে পাওয়া যায়—যা একসঙ্গে ক্রাঞ্চি, ঝাল–মশলাদার ও মিষ্টি স্বাদের মিশ্রণ।

হৃদস্বাস্থ্যে গুড় এবং ছোলার ভূমিকা

গুড়ে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও পটাশিয়াম—যা হৃদস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আয়রন রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
ছোলায় পাওয়া যায় ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা কোলেস্টেরল কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক।

নিয়মিত গুড় খেলে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধেও সাহায্য করে, ফলে শরীর আরও শক্তিশালী থাকে।

হজমে সহায়ক গুড়–ছোলা

যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস বা পেট ফোলার সমস্যা থাকে, তাঁদের জন্য গুড়–ছোলা একটি দারুণ উপকারী খাবার।
উভয় খাদ্যে থাকা ফাইবার—
মলত্যাগ স্বাভাবিক করে
হজম শক্তি বাড়ায়
হজম এনজাইম তৈরিতে সাহায্য করে
ড. বাজপেয়ীর মতে, সকালে ভাজা ছোলা ও সামান্য গুড় খেলে দিনের শুরুটাই হজমবান্ধব হয়।

মাংসপেশি শক্তিশালী করতে গুড়–ছোলা

যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা শারীরিকভাবে সক্রিয়, তাঁদের জন্য এটি আদর্শ।
গুড়ের পটাশিয়াম মাংসপেশির খিঁচুনি কমায়
ছোলার প্রোটিন ওয়ার্কআউটের পর মাংসপেশি পুনর্গঠনে সহায়তা করে
ব্যায়ামের পর গুড়–ছোলা খেলে দ্রুত রিকভারি হয় ও শরীর পুষ্টি পায়।

মস্তিষ্ক এবং দাঁতের জন্য উপকারী

গুড়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস স্মৃতি এবং মনসংযোগ বাড়ায়।
গুড় এবং ছোলায় থাকা ফসফরাস দাঁত এবং হাড়কে মজবুত করে।
ড. বাজপাই জানান—
১০ গ্রাম গুড়ে থাকে প্রায় ৪ মিগ্রা ফসফরাস, আর ১০০ গ্রাম ছোলায় থাকে আরও বেশি।

কখন খাবেন গুড়–ছোলা?

গুড় শরীর গরম রাখে—তাই শীতে এটি বেশি উপকারী। গরমকালে চাইলে গুড় ঠান্ডা করে খেতে পারেন। ড. বাজপেয়ীর টিপস—
গুড় ফ্রিজে রাখুন, এতে এটি ঠান্ডা থাকবে
গুড়–জল বানিয়ে পান করতে পারেন
গুড়–জল বানাতে সারা রাত এক গ্লাস জলে সামান্য গুড় ভিজিয়ে রাখুন।
সকালে সেই জল পান করুন—শরীর গরম না করেই গুড়ের উপকার পাওয়া যাবে।