আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বজুড়ে হাজারো রকমের ফল পাওয়া যায়—কিছু স্বাদে অতুলনীয়, পুষ্টিতে ভরপুর; আবার কিছু ফল দেখতে আকর্ষণীয় হলেও আসলে প্রাণঘাতী। অজানা দেশে ভ্রমণকালে বা অচেনা বাজারে এসব ফল দেখলে মনে হতে পারে চেখে দেখাই যায়, কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত আপনাকে মারাত্মক বিপদের মুখে ফেলতে পারে। নিচে দেওয়া হলো বিশ্বের কয়েকটি ভয়ঙ্কর ফলের পরিচয়, বৈজ্ঞানিক নাম ও বিষাক্ত উপাদানের বিস্তারিত—
স্টারফ্রুট (Star Fruit) – Averrhoa carambola
হলুদাভ এই ফল স্বাদে মিষ্টি-টক এবং পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ—কম ক্যালোরি, বেশি আঁশ, আর ভিটামিন-সি। কিন্তু যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি প্রাণঘাতী। এতে উচ্চমাত্রায় অক্সালেট (Oxalate) থাকে, যা রক্তে জমে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। অতিরিক্ত খেলে স্নায়ুতে প্রভাব পড়ে, হতে পারে খিঁচুনি ও মৃত্যু।
এল্ডারবেরি (Elderberry) – Sambucus spp.
কালো (Sambucus nigra), নীল (Sambucus caerulea) ও লাল (Sambucus racemosa)—এই তিন প্রজাতির এল্ডারবেরি পাকলে ও রান্না করার পর খাওয়ার উপযোগী। কিন্তু কাঁচা ফল, পাতা, ছাল ও শেকড়ে থাকে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড (Cyanogenic Glycosides), যা শরীরে হাইড্রোজেন সায়ানাইডে রূপান্তরিত হয়ে বিষক্রিয়া ঘটায়।
ম্যানচিনিল (Manchineel Tree) – Hippomane mancinella
ফ্লোরিডা, মেক্সিকো ও উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে জন্মানো আপেলসদৃশ এই ফলের রস ও পাতা থেকে নিঃসৃত ফোরবোল এস্টারস (Phorbol Esters) ত্বকে ফোস্কা ও প্রচণ্ড প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফল খেলে গলা ও পাকস্থলীতে তীব্র জ্বালা হয়।
বাকথর্ন (Buckthorn) – Rhamnus cathartica
কমলা রঙের ছোট বেরি দেখতে আকর্ষণীয় হলেও এতে থাকে অ্যানথ্রাকুইনোন (Anthraquinones), যা তীব্র ডায়রিয়া ও স্নায়ুতন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে।
লাল বন্য বেরি (Wetland Red Berries) – Ilex verticillata (Winterberry)
উজ্জ্বল লাল এই ফল দেখতে সুন্দর হলেও এর বীজ ও পাতায় থাকে থিওব্রোমিন (Theobromine) এবং অন্যান্য টক্সিন, যা রক্তচাপ কমিয়ে মাথা ঘোরা, বমি ও দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
পীচের বীজ (Peach Pit) – Prunus persica
পাকা পীচ নিরাপদ হলেও এর বীজে থাকে অ্যামিগডালিন (Amygdalin), যা শরীরে গিয়ে হাইড্রোজেন সায়ানাইড (Hydrogen Cyanide) তৈরি করে। বেশি পরিমাণে খেলে প্রাণঘাতী হতে পারে।
পোকবেরি (Pokeberry) – Phytolacca americana
গাঢ় বেগুনি আঙ্গুরসদৃশ এই ফলের মধ্যে রয়েছে ফাইটোল্যাকটোক্সিন (Phytolaccatoxin) ও ফাইটোল্যাকজেনিন (Phytolaccagenin), যা পেটব্যথা, বমি, রক্তাক্ত ডায়রিয়া এবং স্নায়ুর ক্ষতি ঘটায়।
জাট্রোফা (Jatropha) – Jatropha curcas
ভারত ও উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে জন্মানো হলুদ বেরির বীজে থাকে ভয়ংকর রিসিন (Ricin) ও কুরসিন (Curcin) টক্সিন। এগুলো লিভার ও কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে, স্নায়ুতে প্রভাব ফেলে এবং রক্ত সঞ্চালনে ধস নামাতে পারে।
ডেজার্ট গার্ড (Desert Gourd) – Citrullus colocynthis
সাহারা মরুভূমির ছোট শক্ত এই ফলের শাঁসে রয়েছে কুকুরবিটাসিন (Cucurbitacins), যা প্রচণ্ড তেতো স্বাদযুক্ত ও বিষাক্ত। বেশি খেলে অন্ত্রের প্রদাহ, জলশূন্যতা ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
