আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্মার্টফোনের নীল আলোয় ডুবতে থাকা শৈশব এবং কৈশোরকে বাঁচাতে এ বার কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া, তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে সে দেশের সরকারের তরফ থেকে। ১৬ বছরের কম বয়সিদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব ঘিরে উত্তাল গোটা দেশ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বাড়তে থাকা মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ এবং সাইবার বুলিংয়ের মতো ঘটনা রুখতেই এই কঠোর দাওয়াইয়ের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সে দেশের সরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়াসহ গোটা বিশ্বেই শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। মনোবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানীরা লাগাতার সতর্ক করে আসছেন যে, লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের অন্তহীন প্রতিযোগিতা নবীন প্রজন্মকে এক তীব্র মানসিক চাপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর জেরে পড়াশোনার ক্ষতি, ঘুমের অভাব, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এবং চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতার মতো সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

এই প্রেক্ষাপটেই অস্ট্রেলিয়ার একাধিক প্রদেশ, বিশেষ করে সাউথ অস্ট্রেলিয়া, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম), টিকটক, এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলিকে ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করার জন্য আরও শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। ১৬ বছরের কম বয়সি কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে বা ব্যবহার করতে চাইলে তাতে বাধা দেওয়া হবে। যদি কোনও সংস্থা এই আইন লঙ্ঘন করে, তবে তাদের বিপুল অঙ্কের জরিমানা করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

কিছুদিন আগেই নেপালে সমাজমাধ্যম ব্যান ঘিরে বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেহেতু কেবল অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে তাই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বহু অভিভাবক এবং মনোবিদ। এক অজি সাংসদের কথায়, “এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি ছিল। শিশুদের মস্তিষ্ক যখন বিকশিত হতে থাকে, সেই সময় অ্যালগরিদমের তৈরি করা এই ভার্চুয়াল জগতের নেশা তাদের বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেক কিশোর-কিশোরী আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছে। এই আইন তাদের জন্য একটা সুরক্ষাকবচ তৈরি করতে পারে।”

তবে এই প্রস্তাব ঘিরে বিতর্কও রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির মতে, এমন আইন কার্যকর করা অত্যন্ত কঠিন। বয়স যাচাই করার নির্ভুল পদ্ধতি তৈরি করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। অনেকেই ভুয়া তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। তা ছাড়া, একাংশের মতে, এটি ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ। সন্তানের উপর নজরদারির মূল দায়িত্ব অভিভাবকদের, সরকারের নয়। তাঁদের প্রশ্ন, সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে?
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

এই বিতর্কের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার সরকার জানিয়েছে, তারা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ এবং অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করার পরেই পদক্ষেপ করা হবে। আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও একই ধরনের আইন নিয়ে আলোচনা চলছে। অস্ট্রেলিয়া যদি এই আইন পাশ করতে পারে, তবে গোটা বিশ্বেরই তার প্রভাব পড়তে পারে। আপাতত সকলের নজর ক্যানবেরার দিকে, ‘ডিজিটাল প্রজন্ম’কে রক্ষা করতে তারা শেষ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ করে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকেই।