আজকাল ওয়েবডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান এবং পরিবর্তিত কর্মসংস্কৃতির প্রভাবে বিশ্বের বহু বড় সংস্থা—যেমন অ্যামাজন, ইউপিএস, টার্গেট—ইতিমধ্যেই ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে, যার ফলে চাকরিজীবীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ। সম্প্রতি রেডিটে ভাইরাল হওয়া এক পোস্টে একজন ব্যবহারকারী দাবি করেছেন যে, ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই সংস্থার ভেতরে কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন দেখা যায়, যা খেয়াল করলে কর্মীরা আগেভাগেই পরিস্থিতি বুঝতে পারেন। ওই ব্যবহারকারী নিজেকে তিন দফা ছাঁটাইয়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী বলে দাবি করেছেন—দুইবার মানব সম্পদ দলে থেকে এবং একবার ব্যক্তিগতভাবে ছাঁটাই ভুক্তভোগী হিসেবে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ছাঁটাইয়ের প্রায় তিন থেকে ছয় মাস আগে সাধারণত কয়েকটি পরিবর্তন দেখা যায়। হঠাৎ নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়া, সব কর্মীসভায় বসের কথাবার্তায় “কার্যকারিতা”, “কম সম্পদে বেশি কাজ”, “অপারেশনাল উৎকর্ষ”, বা “rightsizing” শব্দের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, এবং বড় পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগ করা—এসবই তার মধ্যে অন্যতম সংকেত। একই সময়ে কর্মপরিবেশে ছোট ছোট ব্যয়কাঠামো কাটছাঁট করা হয় যেমন ভ্রমণ বাজেট, প্রশিক্ষণ, সম্মেলন, ন্যায্য ছুটি বাতিল, এমনকি অফিসে দেওয়া ছোট সুবিধাও বন্ধ করা হয়। অফিস স্পেস কমানো, বিভাগ গুটিয়ে নেওয়া বা কর্মীদের জোর করে হাইব্রিড বা রিমোট মডেলে পাঠানোও এই পর্যায়ে অনেক কোম্পানিতে দেখা যায়। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, তখন কোম্পানির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এক ধরনের আইনি ভাষায় পরিণত হয় এবং “আমরা একটি পরিবার”-ধরনের আবেগঘন বার্তা বারবার পৌঁছে দেওয়া হয়।
ছাঁটাইয়ের এক থেকে তিন মাস আগে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হয়। অনেক কর্মী লক্ষ্য করেন, বসেরা হঠাৎ দূরত্ব তৈরি করেন বা অস্বাভাবিকভাবে আনুষ্ঠানিক হয়ে ওঠেন। কিছু প্রকল্প বাতিল বা বন্ধ করে দেওয়া হয়, পুনর্গঠন শুরু হয়, এবং সিনিয়র কর্মীরা নীরবে প্রতিষ্ঠান ছাড়লেও তাদের জায়গায় কাউকে আর রাখা হয় না। এই সময়ে HR বিভাগের গতিবিধিও বদলে যায়—ক্ষুদ্র ভুল বা নিয়মভঙ্গ নিয়েও কঠোর পদক্ষেপ শুরু হয়, ঠিকাদার ও অস্থায়ী কর্মীদের আগে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং উদ্ভাবনী প্রকল্প বাদ দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণমূলক কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ছাঁটাইয়ের দুই থেকে চার সপ্তাহ আগে পরিস্থিতি প্রায় স্পষ্ট হয়ে যায়। কর্মীদের হঠাৎ প্রকল্প বন্ধ করে কাজের ডকুমেন্টেশন করতে বলা হয়, ম্যানেজাররা গোপন বৈঠকে সময় ব্যয় করেন, কনফারেন্স রুম বারবার দখল থাকে এবং IT বিভাগ নানা ধরনের অ্যাক্সেস যাচাই করতে শুরু করে। অফিসে অস্বাভাবিক ভিড় দেখা যায়, বিশেষ করে এমন দিনে যেদিন কোনও ঘোষণা নেই। ছাঁটাইয়ের আগের ৪৮ ঘণ্টায় অস্বাভাবিক নীরবতা তৈরি হয়, কিছু কর্মী অফিসে থাকলেও তাদের কার্যক্রমে অদ্ভুত গোপনীয়তা দেখা যায়, এবং কখনও কখনও প্রযুক্তিগত অ্যাক্সেস আগেভাগেই ব্লক হতে শুরু করে।
পোস্টের শেষে ব্যবহারকারী পরামর্শ দিয়েছেন যে, এমন লক্ষণ দেখা গেলে কর্মীদের উচিত অবিলম্বে রেজুমে ও লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট করা, পেশাগত যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করা, নিজের সাফল্যের তথ্য নথিভুক্ত করে রাখা, এবং প্রয়োজনে কর্মচুক্তি বা নীতির আইনি দিক জেনে নেওয়া। তিনি সতর্ক করেছেন, ছাঁটাই হলে কোনও নথিতে সঙ্গে সঙ্গে সই করা উচিত নয়—বরং আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ অনেক সময় ক্ষতিপূরণ বা সুবিধা আলোচনা করে বাড়ানো যায়। তিনি আরও লিখেছেন, “চাকরি থাকা অবস্থায় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সহজ—চাকরি হারানোর পর নয়।”
ভাইরাল পোস্টটির নিচে হাজারো ব্যবহারকারী নিজেদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল পেয়েছেন। কেউ বলেছেন, “আমি HR-এ কাজ করি, একশো ভাগ সঠিক।” আরেকজন লিখেছেন, “ছাঁটাইয়ের আগে ‘ডকুমেন্টেশন’ চাপানো হয়েছিল, তিন সপ্তাহ পর আমি চাকরি হারাই।” আরও একজন মন্তব্য করেছেন, “যদি দুই-তিন মাস আগে চিফ HR অফিসার পদত্যাগ করেন, তবে প্রায় নিশ্চিত ছাঁটাই আসছে।”
অবশেষে পোস্টটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরেছে—যারা ছাঁটাই থেকে বেঁচে যান, তাদের কাজের চাপ সাধারণত বেড়ে যায়। তাই কর্মীদের প্রতি পোস্টদাতার বার্তা—অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে চুপ করে থাকবেন না, বরং প্রয়োজন হলে নতুন, স্থিতিশীল সুযোগ খুঁজুন। এই পরিবর্তনশীল কর্পোরেট পরিবেশে প্রস্তুতি থাকাই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।
