আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২৬-এর ভোটের আগে তৃণমূলের তুরুপের তাস ‘ভাষার উপর সন্ত্রাস’। গত কয়েকদিনে দলনেত্রী বারবার সুর চড়িয়েছেন এই ইস্যুতে। সাফ জানিয়েছেন, দেশের কোনও অংশে বাংলা ভাষার উপর অত্যাচার তিনি মানবেন না। এমনকি কোনও ভাষার উপর অত্যাচার মেনে নেবেন না। ১৬ জুলাই বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের বিরোধিতায় পথে নেমেছিল তৃণমূল। ২১জুলাইয়ের মঞ্চকেও একই কারণের জন্যই বেছে নিয়েছিলেন দলনেত্রী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২৬-এর ভোটের আগে এটাই ছিল তৃণমূলের শেষ ২১ জুলাই। সেখানে রাজনীতির মার প্যাঁচ নিয়ে আলচনার বদলে মমতা-অভিষেকের বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচার নিয়ে সরব হওয়া রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি। এক কথায় বুঝিয়ে দেওয়া, ভোট আসবে, ভোত যাবে, কিন্তু বাংলার উপর, বাঙালিদের উপর আক্রমণের জবাব দেওয়া ভোট-বালাইয়ের থেকে বড় নয়। অনেকের মতে, ঘুরিয়ে এই বাংলার আবেগ ইস্যুই ভরাবে মমতার ভোট ব্যাঙ্ক। 

 বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো যখন বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচার চলছে বলে, ভাষা আন্দোলন শুরুর কথা বলছেন, তখন তৃণমূলের সাংসদদের চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে তোতলালেন বিজেপি সাংসদ, প্রাক্তন বিজেপির রাজ্যসভাপতি সুকান্ত মজুমদার? সুকান্তর ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন তৃণমূলের যুব নেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। অধ্যাপক, বিজেপির প্রাক্তন রাজ্যসভাপতিকে ওই ভিডিওতে তৃণমূল সাংসদদের বাংলা কবিতা বলার চ্যালেঞ্জ দিতে শোনা গিয়েছে। আর তাতেই কবিতার মাঝের শব্দ ভুলে গিয়ে তোতলাতে দেখা  গিয়েছে সুকান্তকে। বেশকিছু শব্দ ভুলে গিয়েছেন বলেও মনে হয়। 

আরও পড়ুন: ২৬-এর ভোটের আগেই নতুন দল! আগামী বিধানসভা ভোটে কত আসনে লড়াই? জানিয়ে দিলেন মমতার বিধায়ক হুমায়ুন...

৩৬ সেকেণ্ডের ওই ভিডিওতে সুকান্তকে বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি চান ইউসূফ পাঠান, কীর্তি আজাদ  লোকসভায় দাঁড়িয়ে, সাকেত গোখলে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করুন। এতদূর পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু আবৃত্তির কথা বলতে গিয়ে, একটু বিপত্তি ঘটিয়েছেন সুকান্ত। তৃণঙ্কুরের শেয়ার করা ওই ভিডিওতে সুকান্তকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো চাই  ইউসূফ পাঠান লোকসভার ফ্লোরে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের আবৃত্তি করুন সেখানে। যারা তোমার নিভায়েছে বালু…।‘ পরে যদিও তিনি শুধরে নেন। ঠিক তার পরেই আবার বলেন, ‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব অবোধ…’ মূলত, ‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;- তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি…’কেই তিনি গুলিয়ে ফেলেন সম্ভবত। পরে আবার শুধরে নেন আগের মতোই। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল, তিনি চান তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদদের চেয়ে বিজেপির সাংসদরা ভাল, স্পষ্ট ভাষায় বাংলা বলতে কিংবা আবৃত্তি করতে পারবেন। কিন্তু চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে বঙ্গ বিজেপির প্রথম সারির মুখের বক্তব্যে এ হেন ভুলে রাজনীতির মহলে বেশ শোরগোল। কমেন্ট বক্সে বহু মানুষ হাসাহাসি করেছেন সুকান্ত বক্তব্যে।

 

উল্লেখ্য, ১৬ জুলাইয়ের পরেও যে, মমতা ফের একুশের মঞ্চ থেকে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ নিয়ে সরব হবেন, সে জল্পনা ছিলই। হলও তাই। বক্তব্যের অনেকটা অংশ জুড়েই মমতা নিজের ভাষাকে আগলে রাখার হুঁশিয়ারি দিলেন একের পর এক। কখনও তুলনায় টেনে আনলেন অন্য রাজ্যের প্রসঙ্গ। কখনও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম না করেই কটাক্ষ করে বোঝালেন, বাংলা ভাষায় যাঁরা কথা বলেন, ভিন রাজ্যে তাঁদের উপর আক্রমণ করে, টেলি প্রমটার থেকে দু' লাইন বাংলা লিখে এনে এখানে বাংলা ভাষায় কথা বললে, আদতে বাংলায় ভোট পাওয়া যাবে না।

২১-এর মঞ্চে মমতা বলেন,  বলেন, ‘বাংলা ভাষার উপর চলছে বিরাট সন্ত্রাস। বাংলা ভাষায় কথা বলা নাকি যাবে না। কে মাছ খাবে, কে মাংস খাবে,  কে ডিম খাবে, সব ওরা ঠিক করে দিচ্ছেন। এত সহজ নয়। বাংলা এসব মানবে না। সব মানুষের অধিকার এখানে সংরক্ষিত হবে। ‘ 

ভোটের আগে তিনি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দেন, ‘২৭ জুলাই নানুর দিবসের দিন থেকে প্রতি শনি-রবিবার বাংলা ভাষার উপর যে অপমান, সন্ত্রাস তার বিরুদ্ধে সব ভাষাভাষী লোকেদের নিয়ে মিটিং-মিছিল করুন। যদি কোনও পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার খবর দেয়, বিপদে আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ান, আমাদের জানান। পরিযায়ী শ্রমিকদের বলব ফিরে আসুন। বাংলায় কাজের অভাব নেই।‘ আরও বলেন, ‘২৭ জুলাই থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু করুন। ভাষার অপমান করলে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব। ভাষার উপর সন্ত্রাস মানছি না মানব না। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত, টানা এই আন্দোলন চলবে। আপনাদের বলব আপনারা আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলুন।‘ তৃণমূল কংগ্রেস যখন ভোটের মুখে ভাষা নিয়েও সরব হচ্ছে অতিমাত্রায়, তখন সুকান্তর ‘স্লিপ অফ টাং’ গেরুয়া শিবিরকে অস্বস্তিতে ফেলবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।