আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের একবার রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে চলেছেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। বর্তমানের মমতার দলের বিধায়ক, ২৬-এর ভোটে লড়বেন মমতার বিরুদ্ধেই! দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে রাখা কয়েকটি দাবি আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে পূরণ না হলে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি  আনুষ্ঠানিকভাবে হুমায়ুন কবীরের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ  করবে বলে  বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন নিজেই।

২০১১ সালে কংগ্রেসের টিকিটে প্রথমবার জিতে  বিধায়ক হয়েছিলেন হুমায়ুন কবীর। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই দলত্যাগ করে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং মমতা ব্যানার্জির  মন্ত্রীসভায় ঠাঁইপান। 

আরও পড়ুন: ২৯ জুলাই থেকে সংসদে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা, রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখবেন মোদি! বড় তথ্য সামনে...

যদিও বিভিন্ন ইস্যুতে এরপর হুমায়ুনের সঙ্গে তৃণমূলের ঠোকাঠুকি লাগে এবং তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে রেজিনগর আসনে হুমায়ুন নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এরপর কংগ্রেস এবং বিজেপি ঘুরে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের একবার হুমায়ুন তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদান করেন এবং ভরতপুর আসন থেকে লড়ার জন্য টিকিট পান। 

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই ভরতপুর-১ এবং ভরতপুর -২ ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পরিবর্তনের দাবিকে ঘিরে হুমায়ুনের সঙ্গে দল এবং রাজ্য নেতৃত্বের ঠান্ডা লড়াই চলছিল। সম্প্রতি হুমায়ুন রাজ্য নেতৃত্বকে দুই  ব্লক সভাপতি পরিবর্তনের জন্য ১৫ আগস্ট পর্যন্ত 'ডেডলাইন' বেঁধে দেন।  হুমায়ুনের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান নিয়ামত শেখ পর্যন্ত দাবী করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে দলের কিছু নেতা 'কলকাঠি' নাড়ছেন। 

বুধবার হুমায়ুন অভিযোগ করেন, 'জেলায় যাঁদের সঙ্গে আমি রাজনীতি করছি তাঁরা বারবার বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েও কোনও  লাভ হয়নি। কাজেই এদের সঙ্গে থেকে আর নিজের মান সম্মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।'
 
দলের সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যানের নিয়ামত শেখের দারাজ প্রশংসা করে হুমায়ুন বলেন, 'তিনি নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু আগে থেকেই  যাঁরা দলে রয়েছেন (পড়ুন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার এবং তাঁর অনুগামীরা)  তাদের কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে?'
 
হুমায়ুন বলেন, 'দলের সার্বিক আচরণে আমি যথেষ্ট অখুশি। তাই  সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১৫   আগস্টের  পর নতুন দল  তৈরীর কাজ  শুরু হবে এবং আগামী বছরের পয়লা জানুয়ারি সেই দল আনুষ্ঠানিকভাবে বহরমপুরে  লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতের  মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে।' তৃণমূল বিধায়ক এদিন আরও জানান, তাঁর প্রস্তাবিত নতুন দলের নাম এখনও ঠিক না হলেও এই দল তৈরি করার জন্য  দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দিল্লির  নির্বাচনী দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছেন  এবং প্রয়োজনীয় ফর্ম তুলেছেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, ২০২৬ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর প্রস্তাবিত নতুন রাজনৈতিক দল প্রায় ৫০ টি আসনে  লড়াই করবে। তার মধ্যে মুর্শিদাবাদের ২২ টি ,মালদার ১২ টি এবং উত্তর দিনাজপুরের ৯ টি আসন রয়েছে। এর পাশাপাশি নদিয়া  জেলাতেও ৪-৫ টি আসনে তাঁর দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক।

 


হুমায়ূন এদিন জানান,  'তাঁর প্রস্তাবিত নতুন  রাজনৈতিক দল মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের ভোট ব্যাঙ্ককে টার্গেট করে লড়াই করবে।  তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদেরও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হবে।' মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি সংরক্ষিত আসনে  হিন্দু প্রার্থীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে হুমায়ুন জানিয়েছেন। 

নিজের প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দলের তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও হেভিওয়েট নেতাকে দেখা যাবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে রহস্য বজায়  রেখে হুমায়ুন বলেন, 'মুর্শিদাবাদে  তৃণমূলের ২০ জন বিধায়ক রয়েছেন।  তাঁদের মধ্যে অনেকেই আসতে চাইলেও আমি  কাউকেই আমার রাজনৈতিক দলের স্থান দেব না। কারণ সাধারণ ভোটারের কাছে তাঁদের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই।'
 
নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির সিদ্ধান্তের কথা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে কি জানিয়েছেন?  প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,' দলকে যদি এই কথা জানাই তাহলে কি তারা আমাকে অনুমতি দেবে ?তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব -মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জি যদি মনে করেন  আমাকে ধরে রাখা উচিত আমি তাহলে  দলের বিরুদ্ধে যাব না।'
 
হুমায়ুন এদিন আরও বলেন, '২০২৫ সালের ৫  মে মুর্শিদাবাদের সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন দল এবং প্রশাসনের কাজের মধ্যে সমন্বয় রাখার জন্য ১০ জনের একটি 'সমন্বয় কমিটি' হবে এবং সেখানে আমাকেও রাখা হবে। আজ পর্যন্ত সেই কমিটি গঠন করা হয়নি।'
 
হুমায়ুন আজ জানিয়ে দেন, 'এই মন্তব্যের জন্য দল যদি কোনও ব্যবস্থা নেয় তাকেও আমি স্বাগত জানাবো ,আর দল যদি আমার বক্তব্য শুনে আমাকে নতুন রাজনৈতিক দল করতে বাধা দিয়ে তৃণমূলে সম্মানের সঙ্গে রেখে দেয় সেটাও আমি স্বাগত জানাবো। কিন্তু জেলার কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে  আমি তৃণমূল কংগ্রেস আর করতে রাজি নই।'

হুমায়ুনের নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অপূর্ব সরকার বলেন, 'কে কী করবে সেটা তাঁর নিজের ব্যাপার। আমার এই বিষয়ে কিছু বলার নেই। '