আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক মায়ের চোখে জল এনে দিল তাঁর ১০ বছরের মেয়ের নীরব ভালোবাসার এক গল্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার বাসিন্দা কায় ব্রড (Kay Braud), দুই সন্তানের মা, সম্প্রতি জানতে পারেন তাঁর চার বছরের ছেলে অ্যাটলাসের (Atlas) জামাকাপড়ে কেন প্রতিদিন হালকা করে তাঁর পারফিউমের গন্ধ পাওয়া যায়।

প্রথমে কায় ভেবেছিলেন হয়তো ছেলে ভুলবশত কিছু পারফিউম লেগে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর তিনি দেখলেন, ঘটনাটি মোটেই এত সাধারণ নয়। তাঁর বড় মেয়ে, ১০ বছরের অ্যাভেলিন (Aveline), যে  সাধারণত খুব বেশি আবেগ প্রকাশ করে না, সে'ই প্রতিদিন সকালে গোপনে মায়ের পারফিউম ছিটিয়ে দিচ্ছিল ভাইয়ের জামাকাপড়ে।

যখন কায় মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন সে এমন করছে, অ্যাভেলিনের জবাব শুনে তাঁর চোখে জল এসে যায়। মেয়েটি বলেছিল, “ও যখন দুশ্চিন্তায় থাকে, তখন তোমার জামার গন্ধ শুঁকতে ভালো লাগে। তুমি স্কুলে থাকো না, তাই আমি ভেবেছিলাম, ও যেন তোমার গন্ধে শান্তি পায়।”
এই সরল অথচ গভীর চিন্তাভাবনা কায়কে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। তিনি বলেন, “অ্যাভেলিন ছয় বছরের বড়, স্বাধীনচেতা, নিজের মতো থাকতে ভালোবাসে। অন্যদের আবেগ বোঝে না সহজে। কিন্তু সেই মেয়ে এমন কিছু করল যা ওর সংবেদনশীল দিকটা প্রকাশ করল।”

আরও পড়ুন: পাকিস্তান থেকে লাখে লাখে গাধা কিনে চলেছে চীন, এত চারপেয়ে দিয়ে কী করবে শি জিনপিংয়ের দেশ

কায় জানান, অ্যাভেলিন নিজেও নিজের মতো করে আবেগ সামলায়। “ও যখন মন খারাপ করে, তখন বলে—‘আমি ঘরে যাচ্ছি, দুঃখের গান শুনব আর কাঁদব, যাতে তুমি চিন্তা না করো।’ ও নিজের মতো করে মানসিক ভারসাম্য রাখে।” অন্যদিকে ছোট ছেলে অ্যাটলাস একদম আলাদা। “ও আমার মতোই আবেগপ্রবণ,” বলেন কায়। “সবসময় চঞ্চল, উচ্ছ্বসিত, কিন্তু দুঃখ পেলেই গভীরভাবে কষ্ট পায়।”

এই ভিন্ন মেজাজই অ্যাভেলিনকে ওই মিষ্টি অভ্যাসটি গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করে। মা জামাকাপড় সাজিয়ে রাখার পর সকালে চুপিচুপি ভাইয়ের ঘরে ঢুকে, মায়ের পারফিউমের হালকা ছিটে দিত সে—যেন স্কুলে মা পাশে না থাকলেও, তার গন্ধে ছোট ভাই নিরাপদ অনুভব করে।
কায় বলেন, “আমি অবাক হইনি, কারণ জানতাম ও ভাইকে ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু ওর এই সূক্ষ্ম বুদ্ধি আর গোপন মমতা দেখে মন ভরে গেল। ও কখনও প্রশংসা পেতে চায় না, তাই কেউ জানতে দেয়নি।”

প্রথমে কায় ঘটনাটি কাউকে বলেননি। পরে থ্রেডস (Threads) প্ল্যাটফর্মে (@okay.braud) পোস্ট করেন এই গল্পটি, যা ইতিমধ্যে ১১ লক্ষাধিক ভিউ, ১ লক্ষ ৬৫ হাজার লাইক এবং ৮০০-রও বেশি মন্তব্য পেয়েছে। অ্যাভেলিনের অনুমতি নিয়েই কায় গল্পটি প্রকাশ করেন। মেয়ের একটাই শর্ত ছিল—“সবাইকে জানিও, আমি যখন ইচ্ছে করে ভালো হই, তখনই ভালো হই। সবাই যেন ভাবে না আমি সবসময় ভালো!”

কায় হেসে বলেন, “ও খুব শান্তভাবে যত্নশীল। যদি তাকে কিছু করতে বলো, করবে না। কিন্তু নিজের ইচ্ছায় এমন মিষ্টি কাজ করে বসবে। যেমন, আমি গামি (gummies) ভালোবাসি—তখন ও হঠাৎ স্কুল থেকে ফিরে বলে, ‘মা, আজ গামি পেয়েছিলাম, তোমার জন্য রেখে দিয়েছি।’” শেষে কায় বলেন, “তুমি যদি তাকে সরাসরি বলো যে ও খুব মিষ্টি, ও সঙ্গে সঙ্গে বলে—‘না, আমি তেমন নই।’ কিন্তু আমি জানি, ওর এই নীরব ভালোবাসাই আসলে সবচেয়ে বড় কথা।”